ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

তামাক গিলে খাচ্ছে বনভূমি খাস জমি ও নদীর পাড়

সুনীল বড়ুয়া, রামু ।।

শুধু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নয়,পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তামাক এখন গিলে খাচ্ছে সামাজিক বনায়নের বিস্তীর্ণ বনভুমি,সরকারী খাস জমি ও নদীর পাড়। প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তামাক চাষ আশংকা জনকভাবে বাড়ছে। এমনকি বিগত বছরগুলোতে বনবিভাগের কিছু কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও এখন তাও চোখে পড়ছেনা।চাষীদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ বছর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সরকারী খাস ও বনভুমি। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে বন ও পরিবেশ। সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তামাক চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কাউয়ারখোপ,গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, রাজারকুল,ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তামাক চাষ করা হয়েছে। এসব এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সরকারী খাস ও পতিত জমি, বাঁকখালী নদীর পাড় এবং বনাঞ্চলের সামাজিক বনায়নের জমিতে তামাকের আবাদ করা হয়েছে। কাউয়ারখোপের মনিরঝিলের এম সোলতান আহম্মদ মনিরী জানান, তামাক চাষ স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও গ্রামের সহজ সরল মানুষ অধিক লাভের আশায়, তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। তাছাড়া তামাক খেতের জন্য বিভিন্ন তামাক কোম্পানী সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ায় চাষীরা ক্ষতিকর এ কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তামাক চাষী বলেন,সবজি বা অন্যান্য ফসলের আবাদ করলে প্রয়োজন মত সার মেলে না কিন্তু তামাক খেতের জন্য সারের নিশ্চয়তা আছে। সরকারী খাস ও বনভুমিতে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে রামু কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গর্জনিয়াকচ্ছপিয়া ইউনিয়নে গত পাঁচসাত বছর আগেও এক কানি (৪০ শতক) জমি বছরে পাঁচসাত হাজার টাকায় বর্গা পাওয়া যেত। এখন তামাক চাষের কারণে সে জমি বর্গা দেওয়া হচ্ছে ত্রিশপঁয়ত্রিশ হাজার টাকায়। এত অধিক দামে জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষে লোকসানের আশায় অনেকে বাধ্য হয়ে তামাকের চাষ করছেন। এছাড়া বর্তমানে নানা কারনে চাষযোগ্য জমির সংকট দেখা দেওয়ায় লোকজন বনভূমিতে ব্যাপক ভাবে তামাক চাষ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ এবং সরকারীবেসরকারী তামাকবিরোধী নানা প্রচারণাও তেমন প্রভাব ফেলতে পারছেনা। এমনকি প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় দিন দিন রামুতে তামাক চাষ বাড়ছে।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলার সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি রামুতে নদীর পাড়, সরকারী খাস জমি ও বনাঞ্চলের ভেতরেও বিস্তীর্ণ জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে।

এটা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত। সরকারী ভুমিতে তামাক চাষ বন্ধে অন্যান্য বছর বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও এ বছর তা দেখা যাচ্ছেনা । বিষয়টি রহস্য জনক । রামু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তামাকের গাছ থেকে শুধুমাত্র পাতা সংগ্রহ করা হয়, তাই পাতা বড় করার জন্য খেতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করে চাষিরা। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে একদিকে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়,অন্যদিকে সার সংকট দেখা দেয়। আবার তামাক পোড়ানোর চুল্লীতে কাঠ পোড়ানোর কারণে বনাঞ্চলও উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

c3eecdd3ecfda23daa0680fdfad5bb31

পাঠকের মতামত: