ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে আক্রান্ত তিন ইউনিয়নে ত্রানের জন্য হাহাকার চলছে

IMG_20160523_192252মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে আক্রান্ত তিন উপকূলীয় ইউনিয়নে ত্রানের জন্য হাহাকার চলছে। ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তের তিন দিন অতিবাহিত হলেও এখানো পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে অত্যন্ত মানবেতর ও অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে উপকূলীয় তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অসংখ্য পরিবার।

 পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আজগর জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পেকুয়ার জন্য পৃথকভাবে ১৩ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পেকুয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।

 অন্যদিকে সরকারীভাবে বরাদ্দের ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর মরণ ছোবলে মূহুর্তের মধ্যেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় পেকুয়ার তিন উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া। এছাড়াও এ তিন ইউনিয়নের অসংখ্য মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে স্থানীয় মৎস্যচাষীদের ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা।

 সরেজমিনে মগনামা ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে এ ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা, ধারিয়াখালী, মঘঘোনা, শরৎঘোনা, মুহুরী পাড়া, পশ্চিমকূল, কাকপাড়া, জালিয়াপাড়া, হারুন মাতবর পাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামের শত শত কাচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শরৎ ঘোনা গ্রাম। বেড়িবাঁধ সংস্কারে পাউবো ও তাদের নিযুক্ত দূর্নীতিবাজ ঠিকাদারের গাফিলতির কারনে শরৎ ঘোনার পশ্চিমে, পশ্চিমকূল, জালিয়া পাড়া ও কাকপাড়া পাড়া, চেপ্টাখালী পয়েন্টে পাউবোর ৬৪/২ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।

 জানা গেছে, গত এক বছর পূর্বে মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রায় একশত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও পাউবোর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কৌশলে সরকারী টাকা লুটপাট করতে যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসেনি। গতকাল ২২ মে দুপুরে পাউবোর কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে মগনামা পরিদর্শনের সময় জনরোষে পড়েন। এসময় স্থাণীয় সংসদ সদস্য হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছও পরিদর্শন করতে আসেন।

 অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার পাউবোর দূর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী ও পেকুয়ার পাউবোর শাখা কর্মকর্তা (এসও) কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের যোগসাজসে যথাসময়ে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করেনি। পাউবোর গাফিলতি ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের চরম অবহেলায় মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ভাগ্য আজ সাগরের লোনা জলের জোয়ার-ভাটার সাথে মিশে গেছে। অপরদিকে এ তিন ইউনিয়নের লবণচাষীদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লবণ মাঠের উপর মজুদ করে রাখা শত শত মণ কাচা লবণ জলোজ্বাসে ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে।

 পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত সরকারী হিসেবে দেখা গেছে, গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ তিন ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি বাড়ীঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও ১২৩ একর জমির ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে। তিন ইউনিয়নে ৭১০ একর লবণ চাষের জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৫০ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মগনামা, রাজাখালী উজানটিয়া ইউনিয়নে ত্রাণের চাল বিতরনে স্থাণীয় জনপ্রতিধিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি অনিয়ম ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজের পরিবর্তে এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তাদের দলীয় লোকজনের মাঝে ‘ব্যাপক আকারে’ ত্রাণ বিতরণ করছেন। ত্রাণ বিতরণে স্থাণীয় উপজেলা প্রশাসনের তদারকী না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই ইউনিয়নের ‘অসাধু’ ও দলবাজ জনপ্রতিধিরা সরকারী ত্রাণ বিতরনে এ ধরনের স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

 পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন অভিযোগ করেছেন, ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোন বেসরকারী এনজিও এলাকায় ত্রাণ বিতরণ তো দূরের কথা সরেজমিনে এলাকায় পরির্দশন করতে আসেনি। এনজিওদের এহেন ভূমিকায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অথচ পেকুয়া উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক এনজিও কথিত সামাজিক ব্যবসার আড়ালে জমজমাট সুদের ব্যবসা এ অঞ্চলের দরিদ্র লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও দূর্যোগ, বন্যা ও ঘূর্নিঝড় আক্রান্তের পর এলাকায় দূর্গতের মানুষের সহায়তায় তাদের দেখা মেলেনা!

পাঠকের মতামত: