ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

জনশক্তি রপ্তানিতে  ৪৪ বছরে এবারই প্রথম বড় ধস

করোনায় এপ্রিল ও মে মাসে একজনও বিদেশে যেতে পারেননি 

নিউজ ডেস্ক ::  করোনার কারণে ৪৪ বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে এ দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে একজনও বিদেশে যেতে পারেনি। এতে জনশক্তি রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনা সংক্রমণের আগে চট্টগ্রাম থেকে চাকরির জন্য প্রতি মাসে বিদেশে যেত ৮ থেকে ১০ হাজার রেমিটেন্স যোদ্ধা। কিন্তু করোনার থাবায় এ সংখ্যা শূন্যতে নেমে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে এ দুই মাসে একজনও বিদেশে যেতে পারেনি। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি জুন মাসেও।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যায় ৬৮ হাজার ৪ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় ১৬০০ জন। এর পরবর্তী মাসে ফেব্রুয়ারিতে যায় ৫৭ হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় ১৬০৭ জন। সর্বশেষ মার্চে সারাদেশ থেকে যায় ৫১ হাজার ২২৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় মাত্র ১৩৯৬ জন। এপ্রিল ও মে মাসে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় একজনও জনশক্তি রপ্তানি করা যায়নি। অথচ এর আগে ২০১৯ সালে নভেম্বরে গিয়েছিল ৮০৯১ জন। ডিসেম্বর মাসেও একই ধারা অব্যাহত ছিল।
এদিকে ভিসা, বিমান টিকেটসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও করোনার কারণে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে যেতে পারেনি কমপক্ষে ছয় হাজার। এমনকি তারা আদৌ বিদেশে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় খাত হচ্ছে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পাঠানো টাকা। নানা সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে এ খাতকে সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু করোনার কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামায় এ খাতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সাল থেকে বিদেশে বাংলাদেশি জনশক্তির কর্মসংস্থান শুরু হয়। ওই বছরই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি কর্মসংস্থান হয় ৬ হাজার ৮৭ জন। এরপর বিদেশে বাড়তে থাকে বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান। বিগত ৪৪ বছরে বিদেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়। এর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইতালি, জাপান, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনশক্তির কর্মসংস্থান হয় বেশি। জনশক্তি কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হয় সৌদি আরবে। ৪৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি সেদেশে যায়। এরপরের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ হচ্ছে ওমান প্রায় ১১ লাখ, কুয়েতে সোয়া ৫ লাখ, কাতার প্রায় ৫ লাখ, মালয়েশিয়ায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ এবং সিঙ্গাপুরে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যায় ৬৮ হাজার ৪ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় ১৬০০ জন। এর পরবর্তী মাসে ফেব্রুয়ারিতে যায় ৫৭ হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় ১৬০৭ জন। সর্বশেষ মার্চে যায় ৫১ হাজার ২২৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যায় মাত্র ১৩৯৬ জন। অথচ এর আগে ২০১৯ সালে নভেম্বরে গিয়ে ছিল ৮০৯১ জন।’
মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিমান টিকেটসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও করোনার কারণে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে যেতে পারেনি প্রায় ছয় হাজার। বিদেশে যাওয়ার জন্য তারা আমাদের থেকে ছাড়পত্র নিয়েছিল।’

পাঠকের মতামত: