ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

লোহাগাড়ায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব

মোঃ সাইফুল ইসলাম, লোহাগাড়া-চট্টগ্রাম ::

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী, চরম্বা, পুটিবিলা, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। পাহাড় কাটার মাটি ট্রাক বোঝাই করে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বনকর্মীদের যোগসাজশে পাহাড় নিধন চালাচ্ছেন। এতে পদুয়া ও চুনতি ফরেষ্ট রেঞ্জের আওতাধীন বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি জীববৈচিত্রও ধ্বংস হচ্ছে।

চুনতি সাতগড় বন বিভাগের মালিকানাধীন পাটিয়াল পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় কেটে বনাঞ্চল নিধন করছে। কিছু লোক পাহাড় কাটার মাটি ট্রাকে বোঝাই করছেন। এ সময় বন বিভাগের কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি। আর চুনতি অভয়ারন্যেও আওতাধীন সুফিনগর এলাকায় নির্বিচারে কাটছে পাহাড়।

চুনতি সাতগড় এলাকায় পাহাড় নিধনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি মহল। সড়ক সংস্কার ও বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের কথা বলে পাহাড় নিধন করছে প্রভাবশালী মহল। এ প্রভাবশালী মহল এলাকায় পাহাড় কাটার কাজে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সহায়তা দিয়ে আসছে। আবার কেউ কেউ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিয়ে পাহাড় কেটে নিধন করছে। অনুমতি পত্র দেখাতে বললে অনেকে তাতে অপারগতা প্রকাশ করে। বড়হাতিয়া রশিদারঘোনা এলাকায় রাতের আধাঁরে পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। সরেজমিন গেলে তারা জানান, সবাইকে ম্যানেজ করে পাহাড় কাটছি। পাহাড় নিধকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও তাঁরা ধরা পড়েন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, বনবিভাগের লোকদের ম্যানেজ না করলে পাহাড় কাটা যায় না। পাহাড় কাটার আগেই বনবিভাগের লোকজন এসে হাজির হয়।

দিনরাত সমান তালে পাহাড় নিধন চললেও বাঁধা দেওয়ার যেন কেউ সেখানে নেই। দক্ষিণ সাতগড় আজগর আলী সিকদার বাড়ী, বড়ঘোনা বেলা বশিরের ছেলে নুর আহমদ, চুনতি মৌলানা পাড়ার আবুল হোসেন, সাতগরের সাহাব মিয়া, বড়হাতিয়া হাটখোলা মোরা এলাকার বজল আহমদ ও তার পুত্র মো সোহেল, দূর্লভের পাড়ার আব্দুল আলম সওদাগর, পুটিবিলা সোনাইর বর পাড়ার নজির আহমদ, বশির আহম ও মিজান, চুনতি বরঘোনা আক্কাস, নয়া পাড়া আব্দুল আজিজ, পুটিবিলা বেল্লা বর বাড়ির মোবারক, পাহাড় খেকো মোবাশে^র সহ আরো অনেকে পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে।

পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিসার মো: আলাউদ্দিন বলেন, পদুয়া রেঞ্জের আওতাধীন কিছু কিছু পাহাড় ১নং খতিয়ানের। ২নং খতিয়ানের পাহাড় কাটার কারো সাধ্য নেই। কেউ পাহাড় কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, পাহাড় কাটার অপরাধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

চুনতি ফরেষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: নুরুর রহমান বলেন, যোগদানের পর থেকে গাছ কাটা ও পাহাড় কাটার অপরাধে অনেক মামলা দেওয়া হয়েছে। রাতের আঁধারে কেউ পাহাড় কাটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাহবুব আলম বলেন, পাহাড় কাটার অপরাধে বেশ কয়েকজনকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। পাহাড়ার কাটার অনুমতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ পাহাড়ে বাড়ি ভিটার মাটি সমান করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে শর্ত স্বাপেক্ষে কিছু কিছু অনুমোদন দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: ফাহিম মাসুদ বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেলেই বন বিভাগ অভিযান চালায়। এ সময় ডাম্পারসহ পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ হলেও নিধনকারীদের ধরা সম্ভব হয় না। কারণ, বনকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তাঁরা জঙ্গলে আত্মগোপন করে। নিধনকারীরা এখন কৌশল পাল্টে রাতের বেলায় পাহাড় কাটছেন।

পাঠকের মতামত: