ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় অবিরাম ভারী বর্ষণে বাড়ছে জনদুর্ভোগ দুর্গত মানুষকে নিরাপদে যেতে প্রশাসনের মাইকিং

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  অবিরাম ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার কারনে লামা-আলীকদমের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহ বেড়েছে মাতামুহুরী নদীতে। এ অবস্থার কারনে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা অবিরাম ভারী বর্ষণে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) এসএম তারেক বিন সগীর।

টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার ফলে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এতে উপজেলার অন্তত চারটি আভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। অনেক সড়কে জনগন যোগাযোগের বাহন হিসেবে নৌকায় করে চলাফেরা করছে। উপজেলার সর্বত্রে জনদুর্ভোগ বেড়ে চলছে। পাঁচদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বনবিভাগের পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অন্তত ৩০হাজার ঘরের মধ্যে ১০হাজার বসতঘর ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষথেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, কৈয়ারবিল, পৌরসভা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, কোনাখালী, ডেমুশিয়া, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল ইউনিয়নের বেশকিছু নিচু গ্রামে একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। সোমবার বিকালে জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়কে এসএমচর এলাকার একটি অংশের উপর দিয়ে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছিল। পানি যতই বাড়ছিল পাড়াগাঁয়ের রাস্তাগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছিল।

গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার বিএমচর, কোনাখালী ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। তিনি বলেন, আমি সকাল থেকে প্লাবিত ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে তোলা পাহাড়ি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পানির প্রবল স্্েরাতে আমার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চারভাগের তিনভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত ওসমান বলেন, পাহাড়ি ঢল নামায় ইউনিয়নের ৭টি গ্রামে পানি উঠেছে। মাঝেরফাঁড়ি এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসীম উদ্দিন বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে উপজেলার চিংড়িজোন পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ঘের মালিক ও চাষীদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে পৌরসভার একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি একাধিক মহল্লায় বুষ্টির পানি নদীর পানিতে বাধা পেয়ে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।#

পাঠকের মতামত: