ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

লামায় পাথর পাচারের দুই মামলা, দুই শিক্ষকসহ আসামী ৩৭জন

লামা প্রতিনিধি ::

বান্দরবানের লামা উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে ১৩ লক্ষ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাচার করেছে বহিরাগত ও স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। বর্তমানে আরো ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাচারের জন্য মজুদ করে ওই সিন্ডিকেটটি। গত ১২ মাসে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাঁঠালছড়া ও বনফুর এলাকা থেকে এসব পাথর উত্তোলন করে তারা। এ অভিযোগে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নাজনীন সুলতানা নিপা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার পরিবেশ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরো ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকও আসামী রয়েছেন।

মামলার বনপুর এলাকার আসামীরা হলো- মো. মহিউদ্দিন (৪১), জামাল উদ্দিন ফকির (৫৫), হুমায়ন কবির (৫০), ওমর হামজা (৪৮), মনু মেম্বার (৫৫), মো. এনাম (৪০), মো. ফরহাদ (৪২), মুছলে উদ্দিন (৪৮) ও গিয়াস উদ্দিন (৪৫) ও অজ্ঞাতনামা ৬ জন। কাঁঠালছড়া এলাকার আসামীরা হল- ইউনুস সর্দার (৬৫), মনসুর ড্রাইভার (৫০), হোসেন ড্রাইভার (৩৫), মো. হামিদ (৩০), ইলিয়াছ (৩৫), অহিদ (৩৫), মো. মোস্তফা কামাল ছোট্টু (৪০), মো. মিজান (৩৫), নাজিম উদ্দিন মাষ্টার (৪৫), মুজিবুর রহমান (৪৮), মো. মুমিন (৪০), লোকমান (৩৮), মো. ওসমান (৩৫), আনছার উদ্দিন (৩৬), রোমেশ (৩৩) ও মো. ইউসুফ (৩৩) ও অজ্ঞাতনামা ৬ জন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত ও স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, গজালিয়া ও ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পাচার করে আসছে। পরে এতদ্বসংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর জব্দ করে এবং এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান এর পরিদর্শক নাজনীন সুলতানা নীপা জানায়, এজহারে বর্ণিত আসামীরা পার্বত্য লামা উপজেলার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তদন্ত করে অন্যান্য অপরাধীরের আইনের আওতায় আনা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক একেএম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, মামলার কার্যক্রম চলমান থাকবে। আগামীতে আরো কেউ যদি অবৈধ পাথর উত্তোলন ও পাচারের সাথে জড়িত হয় জানা গেলে তাদের বিরুদ্ধেও পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে।

অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাথমিক তদন্তে ফাঁসিয়াখালীর কাঠালছড়া ও বনফুর এলাকার বিভিন্ন জলাধার, ঝিরি, ঝর্ণা ও খাল থেকে গত ১২ মাসে ১৮ লক্ষ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। অবৈধভাবে উত্তোলিত এই সকল পাথর থেকে ১৩ লক্ষ পাথর অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে। অবৈধভাবে উত্তোলিত আরো ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর পাচারের অপেক্ষায় রয়েছে। অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা দুটি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতিকারকদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: