ঢাকা,বুধবার, ১ মে ২০২৪

বাদশার ভালোবাসায় ঘর ছাড়লো ‘প্রিয়া’, অধরা সুখ মামলা-হুমকিতে

সোয়েব সাঈদ, রামু ::   রহিম বাদশার সাথে দীর্ঘদিন মন দেয়া নেয়া চলছিলো হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রিয়া ধরের। নিজেদের প্রেমকে স্বার্থক করতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। প্রিয়া ধর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে রহিম বাদশার সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। মেয়েটির বর্তমান নাম নুসাইবা রহিম।

তাদের ধারনা ছিলো, সমাজ বা পরিবার তাদের এ অসম সম্পর্র্ক কিছুতেই মেনে নেবে না। যে কারনে পালিয়ে বিয়ে করেও তারা এখন সুখের পরিবর্তে মিথ্যা মামলা আর হুমকী-ধমকিতে অতিষ্ঠ সময় পার করছে। মেয়েটির মায়ের করা অপহরণ মামলায় আসামী হয়েছেন তার স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে একটি চিঠি লিখে বাড়ির সদস্যদের দিয়ে যান নুসাইবা রহিম। পরে ওই চিঠিখানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দেন তিনি। চিঠিতে নিজেদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রিয়া ধর (বর্তমানে নুসাইবা রহিম) রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বণিকপাড়া এলাকার খোকন চন্দ্র ধরের মেয়ে এবং রহিম বাদশা একই ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া এলাকার বাদশা আলমের ছেলে। গত ১০ এপ্রিল তারা কাবিননামা মূলে বিয়ে করেন। পরদিন (১১ এপ্রিল) নুসাইবা রহিম বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বামীর সাথে চলে যান।

নুসাইবা রহিম জানান, তিনি ইতিপূর্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তার নাম পূর্ব নাম ছিলো প্রিয় ধর। বিয়ের পূর্বে তিনি পবিত্র কালেমা শরীফ পাঠ করে এবং আল্লাহ প্রেরিত নবী ও রাসুল (স.), ফেরেশতা, আখিরাত, পরকাল, বেহেশত-দোযখ ইত্যাদির উপর পূর্ণ বিশ^াস ও আস্থা স্থাপন করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন। যা তিনি নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করেন।

নুসাইবা রহিম আরো জানান, স্বামীর সাথে তিনি সুখেই ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের সহ নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাকে এবং স্বামীর পরিবার-পরিজনকে চরম বিপাকে ফেলেছে। সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এবং ইর্ষান্বিত হয়ে তার মা রুমা রানী ধর গত ২মে তাকে অপহরণের অভিযোগে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-০২ মামলা (নং সিপি-১০৮/২০১৯) করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই কক্সবাজারকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় তার স্বামী রহিম বাদশা, দেবর হারুন বাদশা, স্বামীর ভগ্নিপতি রিদুয়ান ও জোয়ারিয়ানালা এলাকার মোহাম্মদ হোছাইনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, “মামলায় আমাকে উত্যক্ত ও অপহরণের কথা বলা হয়েছে। অথচ আমাকে কেউ উত্যক্ত বা অপহরণ করেনি। আমি দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে বাস্তবে রুপ দিয়ে রহিম বাদশাকে বিয়ে করে স্বেচ্ছায় চলে আসি। আমি চলে আসার সময় সময় বাড়ি থেকে আমার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, বই-খাতা, কাপড়-চোপড় সহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী সাথে নিয়ে আসি। এতেই প্রমানিত হয় আমাকে কেউ অপহরণ করেনি। আমার স্কুল সার্টিফিকেট এবং জন্মনিবন্ধন মতে আমি প্রাপ্ত বয়স্ক। তাছাড়া আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকার অনেকেই জানতো। এসব নিয়ে আমার এবং আমার স্বামীর পরিবারের মধ্যে কখনো কথা কাটাকাটি হয়নি। বরং আমার পরিবারের সদস্যরাই আমাকে, আমার স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা সহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমাকে ভারতে বা অন্যত্র নিয়ে হত্যা করে আমার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যদের ফাঁসিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। ইতিপূর্বে আমি আমার বিয়ের ছবি ও ভিডিও, পরিবারের কাছে লেখা চিঠি ফেসবুকে প্রকাশ করি। এসব তথ্য সহ আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের হলফনামা, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চুক্তিপত্র, কাবিননামা, জন্মসনদ সহ আমাকে এবং আমার স্বামীর পরিবারকে হয়রানির বিষয়টি আমি লিখিত অভিযোগ সহ কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-০২, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই), রামু উপজেলা চেয়ারম্যান, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট প্রদান করেছি।”

নুসাইবা রহিম বিজ্ঞ আদালত, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সকলের কাছে স্বামী-সংসার নিয়ে স্বাধীন ও নিরাপদে বসবাস করার আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মামলা ও হুমকি-ধমকি থেকে তাকে এবং তার স্বামীর পরিবারকে রক্ষারও জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য নুসাইবা রহিম ও তার স্বামী রহিম বাদশা সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রহিম বাদশার পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ বিয়েতে তাদের কারো মত নেই। এরপরও পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে জড়িয়ে মামলা করা উদ্দেশ্যমূলক। কেবল মামলা নয়, এখন মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে। একারনে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পাঠকের মতামত: