:: এম.আর মাহমুদ ::
বিদায়ী বছরে একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কেমন হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করার কোন অবকাশ নেই। কারণ ইতিমধ্যে নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছে। নতুন মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাও শপথ গ্রহণ পূর্বক নিজ নিজ দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছে। অনেক প্রবীন ও প্রভাবশালী এম.পি মহোদয়রা নতুন বছরের মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পায়নি। ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল এম.পিরা মন্ত্রী পরিষদে স্থান করে নিয়েছে। এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর কঠিন সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের সচিব ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফেব্র“য়ারিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশীল ঘোষণা করা হবে। মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ তথা সরকারি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তাই দলের বেশিরভাগ দায়িত্বশীল নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছে। দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলে দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তিনি নির্বাচিত হবেন এমন আশা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, দলীয় বেশুমার প্রার্থী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। কারণ ‘ন্যাড়া বেল তলায় একবারেই যায়, বার বার যায় না।” বেশিরভাগ ভোটারের অভিমত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। তাই সাধারণ ভোটারেরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা সন্দীহান। কারণ ভোটারেরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে আর ভোট দিতে পারবে না। সে রকম ভোট হলে ভোটের আয়োজন করে লাভটা কি? আমার জীবনে অনেকবার ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছি, দু’বার হয়তো পাইনি। তাই বলে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নাই। দুঃখ হচ্ছে একটাই নতুন প্রজন্মের ভোটারেরা সারা দেশে জীবনের প্রথম ভোটটি প্রয়োগ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। হয়তো তাদের অন্তরে তা নিয়ে ক্ষোভ আছে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তাদের মতে, সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো নির্বাচন তারা আর দেখেনি। শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় একজন শিক্ষক বলতে শোনা গেছে, “ভগবান যে দুটো চোখ দিয়েছে তার সার্র্থকতা খুঁজে পেয়েছি ২৯ ডিসেম্বর রাতে”। যাক এসব মূলকথা নয়। আসল কথা হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতো বিশাল নির্বাচন সম্পন্ন করতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দেশের আমজনতার করের টাকা। এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় না করে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করলে সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে। সেক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদটি নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ অপচয় যেমন রোধ হবে তেমনি বিশাল অংকের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। যদিও বক্তব্যটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য মানানসই নয়। তবে নির্বাচনের নামে ভোটারদের সাথে প্রহসন না করে এ ধরণের নতুন নিয়ম চালু করলে ভোটারেরা মামলা, হামলাসহ নানা ঝামেলা থেকে নিস্তার পাবে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচনে একটি শ্লোগান সবার মুখে শোনা যেত “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।” এখন কিন্তু সে শ্লোগানটি পরিবর্তন হয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে “আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি নেব।” এক সময় স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে গ্রামের ভোটার থেকে শিশুরা পর্যন্ত আনন্দ উৎসবে মেতে উঠত। এখন কিন্তু সেই উৎসব ও আনন্দ আর নেই। চায়ের দোকানগুলোতে জম-জমাট বেঁচা-বিক্রি ও আড্ডা চোখে পড়ে না। সকলেই শংকিত থাকে সংঘাত ও সংঘর্ষ নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি আবেদন, নির্বাচনের নামে তামাশা করে লাভ কি? টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মহিলা ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করলে আমজনতা অনেক ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে।##
পাঠকের মতামত: