ঢাকা,বুধবার, ১ মে ২০২৪

শিশু রোগীই বেশি ।। নিউমোনিয়া : চকরিয়ার হাসপাতালে ঠাঁই নেই অবস্থা

jahuytচকরিয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভারী বর্ষণ ও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণে ঘরে ঘরে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে করে শিশু থেকে বৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বেশি সমস্যায় পড়েছে শিশুরা। আক্রান্ত এসব শিশুকে নিয়ে সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে দৌঁড়ঝাপ করছেন অভিভাবকরা।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল অন্তত ৬০ জন। তম্মধ্যে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালের চিত্র অনুযায়ী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৪৪ জন। এরপর থেকে আরো বেশ কয়েক শিশু সরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসার জন্য যায় বলে তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও পৌরশহর চিরিঙ্গার প্রাইভেট বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীর ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে।

সরজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ভিড় করা রোগীদের সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। আগে থেকে প্রতি শয্যায় একাধিক রোগী ভর্তি হয়ে যাওয়ায় অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝেতে অবস্থান করছে। আবার শিশু রোগীকে কোলে নিয়ে অনেক অভিভাবককে বেঞ্চের ওপর বসে থাকতে দেখা গেছে। এই অবস্থায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশুকে নিয়ে অভিভাবকেরা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভিড় করলেও শয্যা সংকুলান না হওয়ায় ভর্তি করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালেই ছুটছেন। আবার প্রাইভেট চেম্বারেও শিশু রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ছিদ্দিকের বাপের পাড়া এলাকার মোহাম্মদ ছাদেকের ৫ মাস বয়সের পুত্র মো. ফাহিম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তিনদিন ধরে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে সে সুস্থ বলে জানান তার মাবাবা। চকরিয়ার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যম বুড়িপুকুর গ্রামের নুরুল আবচারের ২৯ দিন বয়সের মেয়ে আরশী সুলতানা নোভার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও জ্বর দেখা দিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয় চারদিন আগে। কিন্তু চিকিৎসকদের নানা চেষ্টার পরও এখনো পর্যন্ত শিশুটির অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়া খালী পাড়ার সাদ্দাম হোসেনের ১ মাস ৫দিন বয়সের পুত্র রবিউল আলম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত রবিবার এখানে ভর্তি করানো হয়। শ্বাসকষ্ট ও সাথে ডায়ারিয়া হচ্ছিল শিশুটির।

১ বছর ৭ মাস বয়সের মো. রেশাদ নামের এক শিশুকে হাসপাতালে আনেন বিএমচর ইউনিয়নের বেতুয়া বাজার এলাকার বাবা বেলাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী। কিন্তু শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে স্থান করে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিশুকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ‘হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর বেশিরভাগ শিশু।’ তিনি আরো বলেন, ‘সচরাচর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে এক ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মানবদেহে। শিশুদের বেশি কাবু করে এই ভাইরাস। তবে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেলে তা রোধ করা যায়। হাসপাতালে আগত এসব রোগীকে ভর্তির পর যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিয়ে তাদের সুস্থ করে তোলা হচ্ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. . কর্মকর্তা এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একটু বেড়ে যায়। এছাড়াও গরম, ঠাণ্ডা ও পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের কারণে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় একেবারে কমবয়সী শিশু। তবে এখনো পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ভাল আছে এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় আগত রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে স্থান দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ আরো কয়েকদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও তিনি জানান।

puf

পাঠকের মতামত: