খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলায় ১২ হাজার কৃষক- কৃষাণীকে ১০ আইটেমের শীতকালীন সবজির প্রণোদনার বীজ সারসহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে, চকরিয়া ৩ হাজার ৫০০, পেকুয়ার ২ হাজার, সদর ১ হাজার ৫০০, রামু ১ হাজার ৫০০, টেকনাফে ১ হাজার, মহেশখালী এক হাজার, ঈদগাঁও ৫০০, কুতুবদিয়া ৫০০ এবং উখিয়ার ৫০০ কৃষককে দেওয়া হয়েছে বিশেষ এই প্রণোদনা। যেখানে- মিষ্টিকুমড়া, লাউ, ব্রকলি, ফুল কপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, টমেটো, মরিচ, শিমের বীজ দেওয়া হয়। সাথে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ এমওপি সার। যাঁরা সার পায়নি তাঁদেরকে নগদে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে ৯ উপজেলার ১২ হাজার কৃষক-কৃষাণীকে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বীজ, সারসহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিয়মঅনুযায়ী সেপ্টেম্বর -অক্টোবরের দিকে শীতকালীন বীজ সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলে কৃষকরা বীজ পেয়েছেন নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দিকে। চাষীরা বীজ বপনের পর ৯০ শতাংশ বীজ গজায়নি। এতে করে চাষীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ জন্য চাষীরা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। তারা বলছেন, এসব বীজ মেয়াদোত্তীর্ণ ও খুবই নিম্নমানের। সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের বীজ কিনে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের বিপুল অপচয় হয়েছে। এর আগে প্রণোদনার অংশ হিসেবে উফশী শীতকালীন শাক-সবজি ৫০০০, হাইব্রিড শীতকালীন শাক-সবজি ১২০০০, উফশী বোরো ধান ৩০,০০০, গম ২০০, ভুট্টা ২০০, সরিষা ১০০০, চীনাবাদাম ২০০ এবং ফেলন ২০০ সর্বমোট ৪৮ হাজার ৮০০ জন কৃষক/কৃষানীকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদান করা হয়। এখানেও রয়েছে চরম অনিয়ম। কাগজে-কলমে হিসেব দেখানো হলে-ও মাঠের চিত্র ভিন্ন। কৃষকের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ কৃষক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারীদের পছন্দের ব্যক্তিদের এসব সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ করার কথা থাকলে প্রকৃত পক্ষে পেয়েছেন তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিরা।
পিএমখালী ৬ নং ওয়ার্ডের কৃষক মুজিবুল হক সরিষা বীজ পেলেও চারা গজায়নি। তিনি বলেন, নভেম্বর শেষের দিকে বীজ পেয়েছি। কিন্তু সেই বীজ গজায়নি। কিছু চারা উঠলেও ফলন না আশায় কেটে ফেলেন। এখানে তার ক্ষতি হয়েছে ১০-১৫ হাজার টাকা।
একই এলাকার মনজুর আলম বলেন, ১০ আইটেমের বীজ পেয়েছিলাম। তারমধ্যে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ায় ফলন আসেনি, টমেটোর চারা ফুটেনি। এখানে তার ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার টাকা।
কৃষক মো লোকমান হাকিম বলেন, নভেম্বরের দিকে সরিষা বীজ পেয়েছিলাম। জমির খাজনা ৮ হাজার টাকা, শ্রমিক বাবদ ৫ হাজার টাকাসহ ১৩ হাজার টাকা খরচ করেও এক টাকার ফসল পায়নি। এরকম হাজার হাজার কৃষকের একই অভিযোগ। তারা বলছেন, দেশে অনেক নামি-দামি কোম্পানি থাকতে নাম সর্বস্ব কোম্পানির বীজ কিনে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। যাঁর কারনে কোনো ফসল হয়নি। কৃষকের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার মত নয়। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানিয়েছেন।
কৃষির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলায় ১২ হাজার কৃষক- কৃষাণীকে ১০ আইটেমের শীতকালীন সবজির প্রণোদনার বীজ সারসহ নগদ অর্থসহ মোট ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ উপজেলার ১২ হাজার কৃষক-কৃষাণীকে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বীজ, সারসহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত টাকার বীজ কোনো কাজেই আসেনি কৃষকের। অসময়ে বীজ ও নিম্নমানের বীজ দেওয়ার কারনে সরকারি বিপুল অর্থের ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিজন কৃষকের গড়ে ক্ষতি হয়েছে ৮-১০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা।
নাম না বলার শর্তে দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বীজ সঠিক সময়ে এসেছে। কিছু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কারনেই অনেক পরে কৃষকেরা বীজ পেয়েছেন। তাঁদের পছন্দের বীজ কোম্পানির সাথে চুক্তি ও দরকষাকষিতে মূলত অধিক সময় পার হয়ে যায়। যে কোম্পানির বীজ দেওয়া হয়েছে সেগুলো তালিকায় নেই। মূল প্যাকেটের উপর স্টিকার দিয়ে কৃষকের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এটার সঠিক তদন্ত হলে আসল রহস্য বের হবে।
কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, সময়মত বরাদ্দ না আসায় কৃষকেরা বীজ পেতে দেরি হয়েছে। মানহীন কোম্পানির বীজ দেওয়ার কারনে কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কৃষকরা অভিযোগ করবে, তাঁদের অভিযোগের শেষ নেই। এরপরেও কোন কৃষক যদি সঠিক তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনি সময় করে আসেন সরাসরি কথা বলবো।
পাঠকের মতামত: