ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারে বাসা ভাড়া খাতে ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সরকারি ডরমেটরী বরাদ্দ নিয়ে রীতিমত লুটপাটে মেতেছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের একটি অংশ। তারা দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করে আসলেও বেশিরভাগ কর্মচারী বাসা ভাড়া পরিশোধ না করে বহাল তবিয়তে রয়েছে। অথচ প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বেতন-ভাতার সঙ্গে বাসাভাড়াসহ সবধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে সরকার থেকে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারের অন্তত সাতটি ভবনে ৪/৫ বছর ধরে ৩০ থেকে ৪০ জন সরকারি কর্মচারী বসবাস করছেন। আর এই অবস্থার কারণে বাসা ভাড়া বাবদ উল্লেখিত কর্মচারীরা সরকারের প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁিক দিয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, স্টাফ কোয়ার্টারে এসব সরকারি কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে এবং কেউ কেউ ব্যাচেলর হিসেবে বসবাস করলেও প্রতিমাসে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ তাদের বাসা বাবত পৌরকর ও পানির পাম্পের বিল যথারীতি পরিশোধ করে আসছেন। পক্ষান্তরে বিগত ৪-৫বছর যাবত উপজেলা পরিষদ বাসাভাড়া বাবত তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও পাননি।

সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে বাসাভাড়া কর্তনে হিসার রক্ষন বিভাগের দায়িত্ব থাকলেও সংশ্লিষ্টরা উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এই সুযোগে সরকারি কর্মচারীরা ভাড়া না দিয়ে দিব্যি স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করে গেছেন। এমনকি অনেকে বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসায় থাকতে থাকতে ইতোমধ্যে অবসরেও চলে গেছেন।

বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নন্দন পাল বলেন, উপজেলা স্টাফ কোয়ার্টারে সরকারি বাসায় কারা থাকছে বা কোন দপ্তরের কর্মচারী থাকছে তা আমাদের জানার বিষয় নয়। মূলতঃ সংশ্লিষ্ট বিভাগ (কর্মচারীরা যে দপ্তরের অধীনে চাকুরী করেন) থেকে অথবা উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানালে আমরা তাদের বেতন থেকে বাসা ভাড়া কর্তন করতাম। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সেটি আমাদেরকে পত্র দিয়ে অবহিত না করায় আমরা উল্লেখিত কর্মচারীদের বেতন থেকে বাসা ভাড়া কর্তন করা সম্ভব হয়নি। আমরা তাদের অফিস থেকে প্রেরিত বেতন বিল দেখেই বেতন বিল পাশ করি মাত্র।

অন্যদিকে ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে বিষয়টির আলোকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়নসমন্বয় সভায় অভিযোগ উপস্থাপন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু। এরপর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটি।

ওইসভার সিদ্বান্তের আলোকে সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর সুফলভোগী সরকারি এসব কর্মচারীদেরকে জরুরীপত্র দিয়ে ভাড়াবাসা পরিশোধ করণে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন সচিব ও চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কমল কান্তি পাল। স্বাক্ষরিত পত্রে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকেও বিশেষ তাগাদা দিয়েছেন সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব।

পত্রে তিনি উল্লেখ্য করেছেন, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে অগ্রগতি দাখিলে ব্যর্থ হলে সুফলভোগী সরকারি কর্মচারীদের বেতন বিল সংক্রান্ত জটিলতার দায়ভার আপনার উপর বর্তাবে।

জানতে চাইলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কমল কান্তি পাল। তিনি বলেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভেতরে সরকারি ডরমেটরী (স্টাফ কোয়ার্টার) বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করেও বেশিরভাগ কর্মচারী বাসাভাড়া পরিশোধ করেনি। অথচ প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বেতন-ভাতার সঙ্গে বাসাভাড়াসহ সবধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে সরকার থেকে। গতবছর উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়নসমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদেরকে বাসাভাড়া পরিশোধ করতে আহবান জানাই।

তিনি বলেন, আহবানের পরও তাঁরা বাসা ভাড়া পরিশোধ না করায় সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর সুফলভোগী সরকারি এসব কর্মচারীদেরকে জরুরীপত্র দিয়ে ভাড়াবাসা পরিশোধ করণে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার আগেও উল্লেখিত সকল কর্মচারীকে বাসা ভাড়া পরিশোধের জন্য একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হয়। এছাড়া একই পত্রে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকেও বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব।

উপজেলা প্রকৌশলী আরো বলেন, সর্বশেষ পত্রের আলোকে অগ্রগতি না হলে উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির পরবর্তী সভার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে বকেয়া বাসা ভাড়া আদায়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: