ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অন্ধজনের আলোর দিশারী চকরিয়া চক্ষু হাসপাতাল, সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  শহরের সুবিধা নিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের মাঝে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে অন্ধজনের আলোর দিশারী হয়ে উঠেছে চকরিয়া চক্ষু হাসপাতাল। গরিব, অসহায়, বয়স্ক রোগী ও শিশুদের মাঝে সল্পখরচে চিকিৎসা সেবাসহ অন্ধত্ব দূর করায় নিরলস কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজারো রোগীর অপারেশনসহ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে লাখের অধিক চক্ষু রোগীকে। চিকিৎসা সেবা আরো প্রসারিত করতে ইতোমধ্যে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সেইজন্য বসানো হয়েছে উন্নতমানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ল্যাব সামগ্রী, দিবারাত্রি ২৪ঘন্টা মনোযোগ সহকারে চোখ পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। ঘরে কাছে নিরাপদ চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনেকেই পেয়েছেন আলোর দেখা। অন্ধত্ব দূর করতে ভর্তি আছেন শত শত রোগী। চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনালের অদুরে ভাঙ্গারমুখ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত চকরিয়া চক্ষু হাসপাতালটি অল্পসময়ের মধ্যে গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য আলোর দিশারী হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, নতুনবছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে চকরিয়া চক্ষু হাসপাতালটি এখন নতুন ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন নতুন ব্যবস্থাপনা। অধ্যাপক জোবাইদুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে চক্ষু হাসপাতালটি। ইতোপূর্বে তার নেতৃত্বে চকরিয়া সিটি হাসপাতালও যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে তার যোগ্য নেতৃত্বে বদলে গেছে চকরিয়া চক্ষু হাসপাতাল।

চকরিয়া পৌরশহরে ভাঙ্গারমুখ এলাকায় অবস্থিত চক্ষু হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের নতুন এমডি অধ্যাপক জোবাইদুল হক। হাসপাতালের ভেতরে বাইরে ঝকঝক করছে। কোথাও নেই ময়লা আবর্জনা। নেই কোনো দুর্গন্ধ। চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই সময়মতো হাসপাতালে আসেন। চক্ষু হাসপাতালের রোগীদের আর কোনো অভিযোগ নেই।

হাসপাতালটিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর নেপথ্য রয়েছেন হাসপাতালের নতুন এমডি অধ্যাপক জোবাইদুল হক। তিনি হাসপাতালটির নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছেন। ভোর থেকে হাসপাতালে এসে নিজের পরিবারের মতো পরিচর্যা করেন তিনি। দিনভর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছেন।

হাসপাতালটির ইন্টেরিওর ডিজাইন চমৎকারভাবে করা হয়েছে যে, ভেতরে প্রবেশ করলেই মন ভরে যায়। রোগীর কাছে মনেই হবে না যে, তিনি হাসপাতালে আছেন। মনে হবে ঘরে বসেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চকরিয়া উপজেলার একমাত্র চক্ষু হাসপাতালটির সেবা এখন নিজ উপজেলা ছাড়িয়ে আরও ৮টি উপজেলার রোগীরাও পাচ্ছেন। বিশেষ করে কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, রামু ছাড়াও বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার মানুষ।

হাসপাতালটি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত চোখের রোগীরা সহজে আসতে পারছে। হাসপাতালে নিয়মিত চোখের রোগী দেখেন একজন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকসহ আরও ৫জন অভিজ্ঞ ডাক্তার। তারা নিয়মিতভাবে রোগী দেখে থাকেন।

চিকিৎসকদের সহায়তায় রয়েছেন অভিজ্ঞ নার্স ও কর্মচারীরা। তারা চোখের রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চক্ষু রোগীর জন্য আনা হয়েছে উন্নত মানের অপারেশন মেশিন। সম্পূর্ন কম্পিউটাররাইজ পদ্ধতিতে চক্ষু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ খোলা রয়েছে। পরীক্ষা চালু এবং যন্ত্রপাতি স্লাইট ল্যাম্প মেশিন বসানো হয়েছে।

চোখের চিকিৎসায় চকরিয়া চক্ষু হাসপাতালে ব্যবহৃত হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি। তাই চক্ষু হাসপাতালটি এতাদাঞ্চলের অগণিত মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। ছানি থেকে জটিল সমস্যা, আবার হঠাৎ হওয়া চোখের রোগ থেকে বহুদিনের পুরনো অসুখ সবকিছুরই চিকিৎসা করে থাকে চকরিয়া চক্ষু হাসপাতালটি। আধুনিক, যন্ত্রণামুক্ত এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে চোখের চিকিৎসা করা হয়।

হাসপাতালে আগত রোগীরা বলছেন, সমস্যা ছিল, ছানী ছিল। বড়লোক ছিলাম না তাই আগে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। এখানে এসে আমি চিকিৎসা ফ্রিতে নিতে পারছি।

চকরিয়া চক্ষু হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক জোবাইদুল হক বলেন, চোখ মানুষের একটি গুরুত্বপুর্ণ সম্পদ। চোখ না থাকলে এই সুন্দর পৃথিবী কেবলই অন্ধকার। রোগী আসার আসলেও দায়িত্ব নিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নাম নথিভুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। সমস্যা শুনে সহকারীরা রোগীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কোনো ধরণের সমস্যা না সেজন্য সার্বক্ষকিন দেখাশোনা করার জন্য সহকারীরা প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালের মধ্যেই রয়েছে নিজস্ব ওষুধের দোকান। এখানে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ বিক্রি করা হয়। অতি সহজেই পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় সব ওষুধ। আর যদি দরকার হয় চশমার, তবে তার ব্যবস্থাও আছে হাসপাতালেই। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার দৃষ্টির জন্য পাওয়া যাবে আধুনিকতম চশমাটি। যার মাধ্যমে দৃষ্টি হয়ে উঠবে স্বচ্ছ এবং উজ্জ্বল। আমরা আগামী একটি বিভাগ করবো, সেটা হচ্ছে কাউন্সেলিং বিভাগ।

এখানে চক্ষু রোগীদের কাউন্সিলিং করা হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করা হবে। কারণ চক্ষু রোগীদের পরীক্ষা দিলেই ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের সহজে সেবা পায় সেজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাখা হবে। ##

পাঠকের মতামত: