ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ চোরাইকাঠ ছেড়ে দিলেন বিট কর্মকর্তা

মুহাস্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া:kaaaa
পেকুয়া উপজেলায় উৎকোচের বিনিয়য়ে জব্দকৃত মাদার ট্রি গর্জনসহ বিপুল পরিমাণ চোরাই কাঠ ছেড়ে দিয়েছেন খোদ উপকূলীয় বন বিভাগের একজন বিট কর্মকর্তা! ঘুষখোর বিট কর্মকর্তার এ ধরনের ঘৃণিত কর্মকান্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা। উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে, গতকাল ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) দুপুর সাড়ে[ ১২টার দিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা-বানিয়ারছাড়া সড়কের পেকুয়া সদরের গোঁয়াখালী রাবার ড্যামের পশ্চিম পাশ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) সকাল থেকে পেকুয়া বাজারস্থ চোরাই কাঠের ডিপো থেকে কুতুবদিয়া উপজেলার চিহ্নিত কাঠচোরদের কাছে পাচারের জন্য ট্রলি ভর্তি করে মাদারট্রি গর্জনসহ অন্যান্য প্রজাতির বিপুল পরিমাণ চোরাই কাঠ মগনামা-বানিয়ারছড়া সড়কের পেকুয়া সদর গোয়াখালী রাবার ড্যামের পশ্চিম পাশে সড়কের উপরেই মওজুদ করে রাখে। চোরাই কাঠের মধ্যে মাদার ট্রি গর্জন গাছের বড় সাইজের তিন টুকরা গাছও ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার চোরাই কাঠ ওই স্থানে মওজুদ দেখে স্থানীয় কয়েকজন সচেতন লোক সংবাদকর্মীদের খবর দেন। পরে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে ফোনে চোরাই কাঠ মওজুদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ও ফরেষ্ট গার্ড আক্কাসসহ আরো একজন বন কর্মচারী রাবার ড্যাম এলাকায় এসে মাদার ট্রি গর্জনসহ প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার চোরাই কাঠ জব্দ করেন। এসময় বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন কর্তৃক চোরাই কাঠ জব্দের ছবি ধারন করেন এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী। বিট কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসলে গতকাল শুক্রবার ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা সদরে চলে আসেন। সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর পরই শুরু হয় বিট কর্মকর্তার সাথে কাঠ চোরাকারবারীদের দফারফা!
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, মগনামা বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ও ফরেষ্ট গার্ড আক্কাস উদ্দিন কুতুবদিয়ার কাঠ চোরাকারবারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নেন এবং দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জব্দকৃত চোরাইকাঠগুলো ছেড়ে দেন। এবং এসময় চোরাইকাটগুলো ইঞ্জিন চালিত তিনটি ড্যানিস বোটে তুলে তেন চোরাকারবারীরা। পরে বিট কর্মকর্তার সহায়তায় নির্বিঘেœই কুতুবদিয়ায় ণৌপথে পাচারে সহায়তা করেছেন খোদ বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে ফরেস্ট গার্ডরা! এ ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় উপস্থিত সচেতন জনতা। এদিকে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বিকাল ৪টার দিকে উপকূলীয় বনবিট মগনামা বন বিটের আশেপাশে গিয়েও দুপুরে জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ চোরাই কাঠ ও গাছের মধ্যে এক টুকরা চোরাই কাটের ও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এসময় বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে কাঠ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, কুতুবদিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা অসীত কুমারের নির্দেশে তিনি চোরাই কাঠগুলো ছেড়ে দিয়েছেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা নির্দেশ না দিলে তিনি আটককৃত চোরাই কাঠ অফিসে নিয়ে আসতেন। তিনি এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করতে সবিনয়ে অনুরোধ জানান এ প্রতিবেদকের কাছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন মগনামা উপকূলীয় বনবিটে যোগদান করার পর থেকেই নানান ধরনের অনিয়ম ও সরকারী স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের অবৈধ সমিলগুলো থেকে নিয়মিত বখরা আদায়, পেকুয়া বাজারসহ কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকার ১০/১৫ জন অবৈধ কাঠ ও গাছ পাচারকারীদের সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলেও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও ওই বিট কর্মকর্তার দাবীকৃত চাঁদা দিতে কেউ অস্বীকার করলে তাকে বন মামলা দিয়ে অহেতুক হয়রানী করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পেকুয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার হানিফ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ী এলাকার প্রতিপক্ষের কিছু কুচক্রি লোকজনের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা উৎকোচ নেন বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। এরপর চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হানিফ চৌধুরীকে ১ নং আসামী করে বিট কর্মকর্তা নিজে বাদী হয়ে একটি ভূঁয়া ঘটনা সাজিয়ে একটি বন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। পরে ওই তথাকথিত সিাজানো বন মামলার সূত্র ধরে নিরীহ শিক্ষক হানিফ চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত কয়েক মাস ধরে মগনামা বনবিটে কর্মরত ঘুষখোর বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনের দায়েরকতৃত সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক বন মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন মাষ্টার হানিফ চৌধুরী। এরকম আরো বহু মিথ্যা মামলা দিয়ে পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিরীহ সহজ সরল লোকজনদের সাজানো বন মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন বিতর্কিত ও ঘুষখোর বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। পেকুয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার হানিফ চৌধুরীকে বনবিট কর্মকর্তা কর্তৃক মিথ্যা মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে গত কয়েক মাস পূর্বে এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক ও এলাকাবাসীরা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবীতে পেকুয়া উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেছিল।
মগনামা বন বিটের কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনের নানান ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রসঙ্গে জানতে ২১ অক্টোবর সকালে উপকূলীয় বন বিভাগের চনুয়া ও কুতুবদিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা অসীত কুমার পালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গত ২০ অক্টোবর কিছু চোরাই কাঠ আটাক করে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয়রা আমাকে অবহিত করেছে। তার ব্যাপারে আপনারা (সাংবাদিকেরা) পত্রিকায় লেখালেখি করেন; আমার কোন আপত্তি নাই। আপনার নির্দেশে বিট কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চোরাই কাঠ ছেড়ে দিয়েছে বিট কর্মকর্তার এমন দাবী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিট কর্মকর্তার দাবী সঠিক নয়, তিনি মিথ্যা বলেছেন। মগনামা বিট কর্মকর্তার নানান ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে তিনি সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন এ রেঞ্জ কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত: