ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালীর শতাধিক মাঝিমাল্লা নিখোঁজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
ঘুর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে গতকাল ৩০ মে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। মহেশখালীতে ১ লাখের উপরে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে জরুরী ত্রাণ সহায়তা।
মহেশখালী থেকে জানান, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চলতি দায়িত্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন প্রাথমিক ভাবে মহেশখালীর ৮ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার আনুমানিক ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ৫ হাজার ৪ শ ৮০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৮ হাজার ৭ শ’টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ভাবে নিখোঁজ রয়েছে ৭ জন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের বরাত দিয়ে তিনি জানান এখানে ৬ শত হেক্টর পানের বরজ ও ২শত হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শস্য নষ্ট হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে মহেশখালীতে ৫ হাজার লোককে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল। এমবি রেজা খান নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল সকালে আধা ঘণ্টা বিরতিতে দুই দফায় ঝড়ের আঘাতে বহু গাছপালা ও গ্রামীণ অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যায়। ছিড়ে যায় ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের জন্য স্থাপিত ক্যাবল সংযোগ। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরুপন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির একজন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফি।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান ইতোমধ্যে মহেশখালীতে ত্রাণ হিসেবে ১৯ মেঃটন চাল খাদ্য শস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ইতোমধ্যে শুকনো খাদ্য ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে। অপরদিকে মহেশখালীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের মহেশখালী কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা আবুল বশর জানান ৩৩ হাজার ও ১১ হাজার কেবির সব সংযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে বহু বৈদ্যুতিক খূঁটি।
মহেশখালী থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীর সকল ্ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় প্রবল বেগে বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়ের কারনে এলাকা লন্ডভন্ড হয়েছে। মহেশখালীতে বাতাসের গতিবেগ ১২১কি:মি:। ফলে মোরা,র কবলে পড়ে মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ী, কুতুবজোম, শাপলাপুর, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া ও পৌরএলাকা সহ ৫ হাজার এর অধিক সম্পূর্ন বিধ্বস্থ, আংশিক প্রায় ৮হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কয়েক হাজার পানক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। শত শত চিংড়ী প্রজেক্ট ও নি¤œাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তায় বড় বড় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রমজানের সময় অনেক পরিবারকে খোলা আকাশের নীচে রাত্রী যাপন করতে হবে বা সন্ধ্যা হলে পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নিতে হবে।
ভোর সাড়ে ৬টার দিকে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মহেশখালী এলাকা অতিক্রম করে। ভাটার সময় হওয়ায় মহেশখালী দ্বীপে পানি না উঠলেও নি¤œাঞ্চল ও চিংড়ী প্রজেক্ট প্লাবিত হয়েছে। প্রচন্ড বাতাসের কারনে কাচা ঘর বাড়ী, স্কুল, মাদরাসা, ঘেরা বেড়া বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ উপড়ে পড়ে। চিংড়ী ঘের লবনের গুদাম ও পানের বরজ ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। গতকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরারত অবস্থায় থাকা মহেশখালীর ১০ টির বেশী ফিশিং ট্রলার প্রায় শতাধিক মাঝি মাল্লা নিয়ে কুলে ফিরে আসেনি। পৌর এলাকার একজন বোট মালিক জামাল কোং জানান তার মালিকানাধীন এফবি রেজা খান নামক ফিশিং ট্রলারের ২২জন মাঝিমাল্লার কোন হদিস মিলছেনা।ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভোর ৬ টার পর থেকে মহেশখালীর ধলঘাটা,মাতার বাড়ীতে বেশী ঘর বিধস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহামদুল্লাহ। মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র্র্র্রে আশ্রয় নেওয়া নারী পুরুষ দুপুর দিকে বাড়ী ফিরে দেখে অনেকের বাড়ী “মোরা” এর কবলে পড়ে সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন মাতারবাড়ী ,ধলঘাটা ও কুতুবজোম সহ চিহ্নিত এলাকার জন্য ১৯ মে:টন চাউল বরাদ্ধ প্রদান করেছে।

পাঠকের মতামত: