ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফ আনসার ব্যারাক ও সাংবাদিকদের উপর হামলা একই সুত্রে গাথাঁ

Coxsbazar journalist pict  14_05_2016এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৪ মে ॥

কক্সবাজারের টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে স্বশস্ত্র হামলায় আনসার কমান্ডার নিহত , অস্ত্র ও গুলি লুট এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া ৫ সাংবাদিকের উপর নগ্ন হামলার ঘটনা একই সুত্রে গাথাঁ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় অধিবাসিসহ সাংবাদিক সমাজ। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের নি®ফলা অভিযানে কোন অপরাধী গ্রেফতার হয়নি, উদ্ধার হয়নি লুন্ঠিত অস্ত্রও। তবে এ ঘটনায় আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বাদী অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামী করে শনিবার সকালে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে, পাঁচ সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী কক্সবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসুচী অব্যাহ রয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাত ২টা ২০ মিনিটের সময় স্বশস্ত্র দুর্বৃত্তরা টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে হানা দেয়। প্রথমে আনসার সদস্য অজিত বড়ুয়াকে আটকে মুখে স্কসটেপ লাগিয়ে বেঁধে রাখে। এসময় দায়িত্বরত আনসার পিসি আলী হোসেন এগিয়ে আসলে এক পর্যায়ে দুবৃত্তরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আলী হোসেনের উপর গুলি বর্ষণ করে। আহত আনসার সদস্যকে স্থানীয় ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শালবাগান ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকের সদস্য ইব্রাহীম খলিল জানান, শুক্রবার ভোর রাতে দায়িত্ব শেষ করে বাথ রুম যান তিনি। এমন সময় বাইরে থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখেন ১৫/২০ জন মুখোশধারী ডাকাত ব্যারাকে ঢুকে আনসার সদস্যদের রশি দিয়ে বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। বিষয়টি তিনি মোবাইল ফোনে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানান। পরে তিনি গুলির আওয়াজ পান। ডাকাতরা ১৫ মিনিটের মধ্যে ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০টি কার্তুজ লুট করে নিয়ে যায়।

সকালে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করে।

এদিকে, ওই ঘটনা কাভার করা জন্য ঘটনাস্থলে যান সাংবাদিকরা। ঘটনার ১৫ ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া স্কুল মাঠে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন রুবেল, তার ক্যামেরাপার্সন ফয়েজ, ইন্ডেপিন্ডেন টিভির জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু, তার ক্যামেরাপার্সন শরীফ, ৭১ টিভির ক্যামেরাপার্সন বাবু দাশ। এসময় ভাংচুর করে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তিনটি ক্যামেরাও। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভূট্টোর নেতৃত্বে এ হামলা ঘটনা ঘটনো হয় বলে নিশ্চিত করেন আহত সাংবাদিকরা।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেন, আনসার ব্যারাকে স্বশস্ত্র হামলায় আনসার কমান্ডার নিহত , অস্ত্র ও গুলি লুট এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া ৫ সাংবাদিকের উপর নগ্ন হামলার ঘটনা একই সুত্রে গাথাঁ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকরা। শনিবার সকালে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় দেশ ব্যাপী বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষনা দেন তারা। কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেলসহ সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ।

পরে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সাংবাদিক নেতারা জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপের পর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিকদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন ও সাংবাদিক নেতারা।

এদিকে, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি অভিযান পরিচালনাকারি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামী করে শনিবার সকালে মামলা নথিভূক্ত হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও টেকনাফ থানার পরিদর্শক ( ওসি, তদন্ত) মোঃ কবির হোসেন।

———————

পাঠকের মতামত: