মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
তিন যুগের ভোগদখলীয় জায়গা থেকে উচ্ছেদের আতঙ্কে অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে অসহায় ২৪টি পরিবার। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের তারাবুনিয়া পাড়া নাইক্ষ্যং ঝিরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। জনৈক আব্দুল মান্নান(৭৮) নামে চট্টগ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তারাবুনিয়া এলাকার পাদু ম্রো পাড়া, কালু চাকমা পাড়া সহ কয়েকটি বাঙ্গালী পরিবারের লোকজন।
অভিযোগকারী তনওয়াই মুরুং পিতা- লারত কারবারী জানান, ২৮৯নং চৈক্ষ্যং মৌজার ৩৭৫নং দাগে আর/২১৩ নং হোল্ডিং এর তিন একর জায়গা সরকার কর্তৃক ১৯৮১-৮২ সালে বন্ধোবস্তী পেয়ে বসতবাড়ি করে ভোগদখলে আছি। আমাদের লাগানো গাছের বয়স প্রায় ৩৫ বছর। তাছাড়া আমরা পাহাড়ের ঢালু অংশ কেটে জমি তৈরি করে সেখানে চাষাবাদ করি। হঠাৎ করে আজ ৩৬ বছর পরে আব্দুল মান্নান পিতা- মৃত আব্দুল কাদের, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা, পাচঁলাইচ, চট্টগ্রাম নামে জনৈক ব্যাক্তি আমাদের জায়গা তাদের বলে দাবি করে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। সে রাবার প্লট হোল্ডিং নং ৮,৯ ও ১০ মুলে জায়গা দাবি করে। তার লিজের প্লট গুলো ১৯৯৫-৯৬ সালে বন্ধোবস্তী পেলেও ৩০আগষ্ট ২০০৯ সালে জেপ্রবান/লীজ/ এইচ/রাবার/২০০৯-৯৮৮১ নং স্মারকে লিজ চুক্তি ভঙ্গের কারণে তার প্লট চুক্তি বাতিল করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসক।
অভিযোগকারী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী আর/১৮৬ নং হোল্ডিং এর মালিক। ১৯৮০-৮১ সালে বন্ধোবস্তী পাওয়ার পর থেকে আমি বসত বাড়ি করে জায়গা দখলে আছি। তাছাড়া আব্দুল মান্নান এর তিনটি রাবার প্লটের ৭৫ একর জায়গার কাগজে ৩৭৫ দাগের অংশে লিখা আছে। ৩৭৫ দাগে মোট ১১৬০.৫৭ একর জায়গা রয়েছে। আমাদের দখলকৃত জায়গা অধিকাংশ ১ম ও ২য় শ্রেণীর। মান্নানের জায়গা ৩য় শ্রেণী। সেহেতু উক্ত জায়গা তার নয়। বিশেষ করে যদি সরকারী রেকর্ডে তার জায়গা থাকলে সরকারী কানুনগো নিয়ে পরিমাপ করে তার জায়গা বুঝে না নিয়ে নিজের মন মত লামার একজন কানুনগো দিয়ে ম্যাপ করে জায়গা দখল করতে চাচ্ছে। এদিকে সে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন ও সরকারী অফিসারকে দিয়ে আমাদের হামলা, মামলার হুমকি দিচ্ছে। মান্নানের অন্যায়ভাবে দাবিকৃত জায়গায় আমরা পাহাড়ি বাঙ্গালী মিলে প্রায় ২৪টি পরিবারের লোকজন বসবাস করি। সকলের বন্ধোবস্তী কাগজ আছে।
এলাকাবাসিদের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান বলেন, আমি উক্ত জায়গায় ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে দখল করে রাবার বাগান সৃজন করি। আমার রোপিত রাবার চারা গুলো ২০০৫ ও ২০১০ সালে ২বার করে অভিযোগকারীরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। তাছাড়া সাখাওয়াত হোসেন এর বসতবাড়িটি আমার বাগান বাড়ি ছিল।
স্থানীয় চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন, উক্ত জায়গায় আমি আব্দুল মান্নানের দখলের কোন চিহ্ন দেখিনি। দীর্ঘদিন যাবৎ জায়গাটি স্থানীয় মুরুং ও বাঙ্গালীরা দখলে আছে। তবে ২৫ একর করে ৩টি রাবার প্লটের কাগজ আছে আব্দুল মান্নানের। ২০০৯ সালে প্লট গুলো বাতিল করা হয়েছে জানি পরবর্তীতে আর পুর্নবহাল করা হয়েছে কিনা আমি জানিনা।
পাঠকের মতামত: