নিউজ ডেস্ক :: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া আলোর পাঠশালার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল পারভিন আক্তার। গত ২৫ এপ্রিল প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে। সেই পাঠশালার শিক্ষার্থীদের ঈদ উপহার দেওয়া হয়। মেয়ের নামে বরাদ্দ উপহার নিতে এসেছিলেন বাবা এনায়েত উল্লাহ। উপহারসামগ্রীর প্যাকেটটি হাতে নিতেই তাঁর দুই চোখ পানিতে টলটল করে ওঠে, ভেঙে পড়েন কান্নায়।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির ১৯৯ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী এই উপহার পান। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আলোর পাঠশালা মাঠে এই ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। উপহার সামগ্রীর প্যাকেটে ছিল পোলাওয়ের চাল, মুরগি, চিনি, আলু, সেমাই, দুধ, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, মাংসের মসলা, সাবান ও মাস্ক।
দমদমিয়া গ্রামের বাসিন্দা নবী হোসেন। পেশায় একজন জেলে। চার বছর ধরে ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে বিজিবি। করোনাকালে তাঁর সংসারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চার মেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। আলোর পাঠশালা থেকে তাঁর মেয়ে ঈদ উপহারসামগ্রী পাবে, এই খবরে তিনিও এসেছিলেন। নবী হোসেন বলেন, ‘প্রায় সময় না খেয়ে দিন যাচ্ছে। ঈদের আগে হঠাৎ করে উপহার পাব, সেটা কোনোভাবেই চিন্তা করিনি। ত্রাণ পেয়ে আমার পরানে পানি এসেছে এবং প্রাণও রক্ষা পেয়েছে।’
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার জানাল, পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাঁর বাবা মো. ইসমাইল। পেশায় একজন গাড়িচালক। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এখনো লকডাউন চলছে। আয়-রোজগার কিছুই নেই। চিনি-সেমাই কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। এর মধ্যে স্কুল থেকে ঈদের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। এবার ঈদের মুরগি, পোলাও ও সেমাই রান্না করে খেতে পারবে। এই উপহারসামগ্রী দেখলেই মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা খুবই খুশি হবেন।
বেলা তিনটায় আলোর পাঠশালার মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও কয়েক দিন আগে মারা যাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থী পারভিন আক্তারের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলোর পাঠশালা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফরিদুল আলম, প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন, পাঠশালার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল ইসলাম, পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আয়ূব, দাতা সৈয়দুল আমিন, সহকারী শিক্ষক সৈয়দ নুর, সহকারী শিক্ষক মিল্লাদুনবী, রবিউল আলম প্রমুখ।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল ইসলাম জানান, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে বিদ্যালয়টি বন্ধের উপক্রম দেখা দিলে প্রথম আলো ট্রাস্ট এগিয়ে আসে। শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি করোনার সময় ঘরে ঘরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ১৯৯ জন গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষা পাচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফরিদুল আলম ঈদের আগে শিক্ষার্থীদের উপহারসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী তুলে দিয়ে প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাদানের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে।
পাঠকের মতামত: