ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মেগা প্রকল্পে ধীরগতি

01অনলাইন ডেস্ক :::
সরকারের নেওয়া ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ঢাকা মেট্রোরেল ছাড়া বাকি চারটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। সেগুলো হলো— এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর। ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত আট প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। এ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ২১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে পদ্মা সেতুর কাজ। এরপর মেট্রোরেল। এ প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধন করা হবে চলতি মাসের যে কোনোদিন। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ প্রকল্পের মূল চুক্তি হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। তবে অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে এর কাজ। এসব প্রকল্পের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  সূত্র জানায়, গত সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারদের জরিমানা করারও ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে এসব প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারায় গত মাসে ফেরত নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে, তেমনি বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারাও। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটরিং করছে সরকার। এদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও দ্রুত করতে গঠন করা হচ্ছে প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফান্ড এবং সংশোধন করা হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত আইনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির সিঁড়িতে উঠেছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের কাজ মোটামুটি সন্তোষজনক। এর বাইরে যে ছয়টি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

দ্রুত এগোচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ : দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। পুরো এলাকায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন দেশি-বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ২১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মৌসুমেই মূল সেতুর কাজের উল্লেখযোগ্য অংশ শেষ করতে চায় সরকার। ইতিমধ্যে মূল সেতুর ১৫ ভাগ শেষও হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্য জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালেই খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। একই পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগও একই সঙ্গে চালু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য দ্বিতল এই সেতু নির্মিত হচ্ছে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। এর ওপর দিয়ে যানবাহন আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেনও।

মেট্রোরেলের মূল কাজের উদ্বোধন চলতি মাসেই : চলতি মাসের যে কোনোদিন মেট্রোরেলের মূল কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের মোট লাইন হবে ছয়টি। এর মধ্যে মেট্রোরেল-৬-এর রুট হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল। লাইন-৫-এর রুট হচ্ছে গাবতলী থেকে ভাটারা। আর লাইন-১-এর রুট হচ্ছে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর। বাকি তিনটি লাইনের রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পর্যায়ক্রমে এগুলোর কাজ এগিয়ে নিতে চায় সরকার। মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে মেট্রোরেল লাইন-৫-এর। দ্বিতীয় দফায় এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এ মাসেই শুরু হয়েছে মেট্রোরেল লাইন-১-এর প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। মেট্রোরেল লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে চলতি মাসেই। লাইন-৬-এর কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন থাকবে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় চারটি চুক্তির মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় চুক্তির মাঠ পর্যায়ের শতভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অন্যান্য চুক্তির কাজ চলমান রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিবছর প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ হবে ৮১ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বলে গঙ্গা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সূত্র জনায়, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন কার্যাবলি মনিটরিংয়ের জন্য ২০১০ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট বিষয়ে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্স সভায় জানানো হয়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭০ শতাংশ ইসিএ ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এ বছর কন্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে বাস্তবে এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে ১০ শতাংশের নিচে। এ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইসিএ ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পোর্ট অথরিটিকে অন্তর্ভুক্ত করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি রোড শোর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র : কক্সবাজারে মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের অগ্রগতি বিষয়ে জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রি-কোয়ালিশন (পিকিউ) আহ্বান করা হয়েছে। অন্যান্য কার্যক্রমও চলছে। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ব্যয় ৬০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হতে এখনো অনেক সময়ের প্রয়োজন। কেননা প্রকল্প অনুমোদন, ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া অন্য কোনো কাজই হয়নি। ফলে চলতি বছর এর মূল কাজ  শুরু হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এলএনজি টার্মিনাল : এলএনজি টার্মিনালের জন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের মধ্যে টার্ম সিট এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। মেট্রোলজিক্যাল ওশান স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে, যা পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সব প্রক্রিয়া শেষ করে এফএসআরইউ স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করা হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই। এ প্রকল্পটি মহেশখালীতে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনালটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৬-এর জুলাই মাসে। অথচ এখনো কাজই শুরু হয়নি।

পায়রা সমুদ্রবন্দর : পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য সরকার এখনো কোনো দাতা গোষ্ঠীকে যুক্ত করতে পারেনি। ফলে নিজস্ব অর্থায়নেই করতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমদিকে এ প্রকল্পে বাস্তবায়নে ভারত, দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখালেও চূড়ান্ত কোনো দেশই সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে এগিয়ে আসেনি। ফলে এ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজও এখনো শেষ হয়নি।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর : এ প্রকল্পের জন্য অর্থায়নকারী সংস্থা এখনো খুঁজে পায়নি সরকার। পায়রা বন্দরের মতোই এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমদিকে ভারত, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ আগ্রহ দেখালেও চূড়ান্তভাবে কোনো দেশই চুক্তিতে আসেনি। তবে এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক ছাড়া যেসব দেশ কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বড় ধরনের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে এগুলো হলো— যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, নেদারল্যান্ড ও জার্মানি। কিন্তু কোন দেশের আর্থিক সহযোগিতায় এটি তৈরি করা হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: