ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

লামায় মাতৃত্বকালীন ভাতা অন্যজনের উত্তোলনের অভিযোগ

লামা সংবাদদাতা :: বান্দরবানের লামায় অসহায় দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ভুয়া তালিকা করে একজনের নামের টাকা অন্য মহিলাকে দিয়ে তোলা হচ্ছে। গত ১৮ জুন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চারজন ভুয়া মহিলা দিয়ে লামা সোনালী ব্যাংক হতে ৭ হাজার ২শ’ টাকা করে উত্তোলন করে তাদের ১২শ’ টাকা করে দিয়ে বাকি ৬ হাজার টাকা দফাদার জয়নাল ও গ্রাম পুলিশ সাহাব উদ্দিন রেখে দেয়ার অভিযোগ করেছেন টাকা উত্তোলনকারী মহিলা মিনু আরা বেগম, জনু আরা, সুফিয়া খাতুন ও বেবী আক্তার। টাকা আত্মসাতের এই ঘটনার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, ইউপি মেম্বার, ব্যাংক কর্মকর্তা ও মহিলাবিষয়ক অফিসের লোকজন জড়িত থাকতে পারে বলে তারা জানায়।

লামা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস জানায়, লামা পৌরসভায় ৪৫০ জন ও সাতটি ইউনিয়নের ১৪৫ জন করে মোট ১ হাজার ১৫ জনসহ সর্বমোট ১ হাজার ৪৬৫ জন দরিদ্র অসহায় মহিলা মাতৃত্বকালীন ভাতা পায়। তারা প্রতিমাসে ৮শ’ টাকা করে তিন বছর (৩৬ মাস) এই ভাতা পাবেন। কখনো ৬ মাস কখনো ৯ মাসের টাকা ভাতাভোগীদের একসাথে দেয়া হয়।

মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে ২০ বছরের বেশি বয়সী দরিদ্র নারীদেরই মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয় সরকার। এছাড়া যাদের বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই আর যাদের মাসিক আয় দেড় হাজার টাকার নিচে এমন নারীরাও এ ভাতা পাওয়ার যোগ্য।

ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য, পরিবার পরিকল্পনাকর্মীসহ ৮ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে ভাতা পাওয়ার যোগ্য নারী নির্বাচনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের ভাতা দিচ্ছেন। ফলে বহু নারী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার অনেকে এ কর্মসূচির কথাই জানেন না।

অভিযোগ উঠে, অসহায় ও দুস্থ নারীদের এ ভাতা দেয়ার কথা থাকলেও ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে স্বচ্ছল, জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজন, এমনকি অবিবাহিত নারীদের নাম ও ছবি, ভুয়া বিয়ের কাবিননামা এবং তাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জাল সনদ ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক নারী বলেন, তালিকা যাচাই করলে অনেক ভুয়া নাম উঠে আসবে। সংশ্লিষ্টরা ভুয়া নাম দিয়ে একজনের নামের টাকা অন্যজন দিয়ে তুলে আত্মসাৎ করছে। প্রতিজন ভাতা ভোগীর নামে আলাদা ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও ব্যাংক হিসাবে কম্পিউটারে তাদের ছবি ডাটা এন্ট্রি না হওয়া ও চেকের পরিবর্তে মাস্টার রোলে টাকা উত্তোলনের কারণে একজনের টাকা অন্যজন তোলার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানায় ভুয়া পরিচয়ে টাকা উত্তোলন করেছে এমন কয়েকজন নারী।

এই বিষয়ে গ্রাম পুলিশ সাহাব উদ্দিন বলেন, আমি টাকা নেইনি। টাকা নিয়েছে দফাদার জয়নাল। কিন্তু মহিলারা জানায়, তাদের হাত থেকে টাকা সাহাব উদ্দিন কেড়ে নেয়।

দফাদার জয়নাল বলেন, ভাই নিউজ করিয়েন না, আপনার সাথে যোগাযোগ করব!

ফাঁসিয়াখালী ইউপি সচিব মো. শহিদ হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ত্রাণের চাল বিতরণ করার কারণে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার চকরিয়া নিউজকে বলেন, জয়নাল ও সাহাব উদ্দিনকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সচিবকে তাদের দু’জনের নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বহিষ্কার করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আতিয়া চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, এই ভাতা দুইবছর দেয়ার কথা ছিল। পরে একবছর বাড়ানো হয়েছে। পরের এক বছরের বাড়ানোর বিষয়টা হয়ত ভাতাভোগীরা জানেনই না। সেই টাকাটা অন্য মহিলা দিয়ে তুলে আত্মসাৎ করতে পারে বলে আমার ধারণা। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাতাভোগীদের নামে চেক বই ইস্যু না করে মাস্টাররোলে টাকা দেয়ার কারণে এই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতিকারীরা। আমাদের লোকবল সংকট থাকায় সঠিক মনিটরিং করাও সম্ভব হচ্ছেনা।

মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি চকরিয়া নিউজকে বলেন, অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: