নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বন বিভাগ। এ ধারাবাহিকতায় পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে অবৈধভাবে পাচারের সময় অভিযান চালিয়ে গত জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৮ ঘনফুট সেগুন গামারীসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ জব্দ করে লামা বন বিভাগ। এক বছরে জব্দকৃত কাঠ নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। একই সময় চোরাই কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ৩৭৪টি মামলা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ৫ চোরাই কাঠ পাচারকারীকে। বর্তমানেও এ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বন বিভাগ। স্থানীয় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা এ অভিযানে সহযোগিতা করে আসছে। এ কারণে পূর্বের চেয়ে বর্তমানে অবৈধভাবে কাঠ পাচার এ বন বিভাগে নেই বললেই চলে জানান বন বিভাগ কর্মকর্তারা। পূর্বের তুলনায় বন বিভাগের এ অর্জন প্রসংশনীয় উল্লেখ করে স্থানীয়রা বলেন, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অবৈধভাবে কাঠ পাচার সম্পুর্ণরুপে রোধ হবে। তারা এ ধারা অব্যাহত রাখতে বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ আর্থিক সালে লামা বন বিভাগের আওতাধীন আলীকদম উপজেলার তৈন রেঞ্জ থেকে ৮০০.৬৫ ঘনফুট ও মাতামুহুরী রেঞ্জ থেকে ২ হাজার ৭৭৬ ঘনফুট কাঠ অবৈধভাবে পাচারের সময় জব্দ করা হয়। এ সময় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয় ৫ জন পাচারকারীকে। এছাড়া পাচারকারকীদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা করা হয় তৈন রেঞ্জে ৫২টি ও মাতামুহুরী রেঞ্জে ৪২টি। আর জব্দকৃত কাঠ নিলামে দিয়ে রাজস্ব আয় হয় তৈন রেঞ্জে ১৭লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং মাতামুহুরী রেঞ্জে ৯৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। লামা সদর রেঞ্জে জব্দ করা হয় ২ হাজার ১৪২ ঘনফুট কাঠ। পাচাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ৩৫টি। এ রেঞ্জের জব্দকৃত কাঠ নিলাম দিয়ে রাজস্ব আয় হয় ৫০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে জব্দ করা হয় ১৯ হাজার ৩৬০ ঘনফুট কাঠ। একই সময় চোরাই কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ২৪৫টি মামলা রুজু করা হয়। আবার এসব জব্দকৃত কাঠ নিলামের মাধ্যমে ৮৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা কোষাগাারে রাজস্ব জমা করা হয়।
স্থানীয়রা বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পাচার দূরের কথা, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের গাছ পর্যন্ত বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া কাটা যায়না। বন বিভাগের পাশাপাশি অবৈধভাবে কাঠ পাচার রোধে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা সচেতন রয়েছে।
এ বিষয়ে বন বিভাগের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার সামছুল হুদা জানান, গত ফেব্রুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে অবৈধ ভাবে কাঠ পাচার রোধে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি সর্বশেষ মাসে প্রায় ৫০০ ঘনফুট কাঠ পাচারকালে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জব্দ করেছেন। এছাড়া ১০০% সরকারী নির্দেশনা মেনেই জোত পারমিট প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে জোট পারমিটের মাধ্যমে সরকারী কাঠ পাচার দূরে থাক, চিন্তাও করা যায়না। সংরক্ষিত বন রক্ষায় বন বিভাগ কর্মকর্তারা অনেক বেশি সচেতন।
এদিকে দুই কোটি একান্ন লাখ বিরানব্বই হাজার টাকা রাজস্ব আয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরীর দিক নির্দশনায় মাঠ পর্যায়ে বনজদ্রব্য পাচার রোধে বনকর্মকর্তারা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর। যার ফলে বনজদ্রব্য পাচারের পরিমাণ এখন একেবারে নেই বললেই চলে। সারাদেশে অবৈধভাবে গাছ কাটা ও পাচার রোধে বন বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় পালন করছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের নিয়োজিত বন রক্ষার পাশাপাশি প্রতি বছর বৃক্ষমেলার মাধ্যমে পাহাড়ি জনপদের অসহায় মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশীয় প্রজাতির চারাগাছ রোপণের ব্যপারে বনবিভাগ উৎসাহিত করে চলেছে। পাশাপাশি এ অঞ্চলে বনবিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের ফলে পাহাড়ে সেগুন, গামারি, গর্জনসহ অন্যান্য প্রজাতির বৃক্ষরোপন বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড় ধসের ঘটনা অনেক কমে আসছে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: