ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

চকরিয়া পৌর কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা নজরুল অপহরণের ঘটনা ইয়াবা বাবুলসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে (৩৮) অপহরণের ঘটনায় আলোচনার ঝড় বইছে। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদের জের ধরে কাউন্সিলর নজরুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইয়াবা বাবুলের নেতৃত্বে অপহরণ করলেও শেষপর্যন্ত পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়ে তাকে জীবিত ফেরত দিতে বাধ্য হয়। তবে নজরুলকে প্রাণে হত্যা করতে না পারলেও অপহরণকারীরা বেধড়ক পেটানোর কারণে শরীরের বিভিন্নস্থানে ফুলা জখম হয়।
এদিকে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম দিগরপানখালী গ্রামের মৃত সোলেমানের ছেলে ইয়াবা কারবারি জিয়া উদ্দিন বাবুলকে (২৮)। এছাড়াও তার দুইভাইসহ আরো ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয় মামলার এজাহারে। অন্য ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দিবাগত রাত বারোটার পর পৌর বাস টার্মিনাল এলাকাস্থ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ১০-১২ জনের মুখোশ পরিহিত একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল তার সন্ধানে অভিযান শুরু করে। শেষপর্যন্ত পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়ে অপহরণের দুই ঘন্টা পর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারীরা। তবে এর আগে ওই কাউন্সিলরকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। কাউন্সিলর নজরুল পূর্ব নিজপানখালী গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ১০-১২ জনের একদল মুখোশ পরিহিতি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কাউন্সিলর নজরুলকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছুড়ে। এর পর তাকে একটি চাঁদের গাড়িতে করে মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায়। এ সময় গাড়িটি মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী রাস্তার মাথা এলাকায় গেলে সড়কের কিনারায় একপাশ দেবে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। পিছু নেওয়া পুলিশ ওই গাড়ি থেকে একটি লম্বা দা (রাম দা) ও এক জোড়া জুতা উদ্ধার করে। এর আগেই দুর্বৃত্তরা কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। এর পর বিপুল সংখ্যক পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে অসংখ্য শুভাকাঙ্খি নজরুলকে উদ্ধারে একযোগে বিভিন্নস্থানে তল্লাশী শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়ে নজরুলকে জীবিত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছিল। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশের একাধিক টিম তাকে উদ্ধারে মাঠে নামে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় অপহরণকারীরা নজরুলকে জীবিত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এর আগে অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ি, একটি রাম দা ও একজোড়া সেন্ডেল উদ্ধার করা হয়।
অপহরণের পর উদ্ধার হওয়া কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমার এলাকায় জিয়া উদ্দিন বাবুল নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিষিয়ে উঠেছে। তাছাড়া সে একজন বড় ধরণের ইয়াবা কারবারি। তার এই কর্মকা-ের প্রতিবাদ করায় মূলত হত্যার উদ্দেশ্যেই আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী ও পৌর পরিষদ নেতৃবৃন্দের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আমাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।’ তিনি আরো বলেন, ‘অপহরণ করার পর আমাকে বন্দুকের বাট দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খানদৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়ে একপর্যায়ে অপহরণকারীরা কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে পৌরসভার পালাকাটার কাছে উলুঘুনিয়া নামক স্থানে জীবিত ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বাবুলসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৭ জনকে আসামী করে লিখিত এজাহার দেওয়ার পর তা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

পাঠকের মতামত: