ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

৩৩ বছর পরে আবারো দিখন্ডিত হচ্ছে লামা

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

বান্দরবান পার্বত্য জেলার সর্ববৃহৎ, জনবহুল ও আয়তনে বড় উপজেলা হচ্ছে লামা। জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস করে এই উপজেলায়। ১৯২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর লামা থানা হিসেবে গঠিত হয়। ১৯৭০ সালের ৯ অক্টোবর আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী ও গজালিয়া থানাকে নিয়ে লামা মহকুমায় উন্নীত হয়। এরপর থেকে পরিচিতি, খ্যাতি, উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্দি পেতে থাকে এই উপজেলার। দু:খের বিষয় যে, ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকার শাসনামলে প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের আওতায় দেশের সকল মহকুমাকে বিলুপ্ত করে জেলা ঘোষণা করা হয়। সরকারী প্রজ্ঞাপনে লামাকে জেলা ঘোষণা করা হলেও একটি মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে তা মাত্র ৩ দিন স্থায়ী হয়। পরে লামা জেলা হতে উপজেলা পর্যায়ে একধাপ নেমে যায়। অপরদিকে, বাইশারী ও গজালিয়া থানা বিলুপ্ত হয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রুপান্তরিত হয়। এতে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশার পাশাপাশি জনগন তাদের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়। এখনও লামাকে জেলা হিসেবে পেতে চায় এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ।

সাবেক মহকুমা ও সাবেক জেলা হিসেবে বান্দরবানে পরবর্তীতে প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের আওতায় নতুন কোন জেলা করা হলে তার দাবী রাখে লামা উপজেলা। কিন্তু যুক্তিক এই দাবী গুলোকে বিনষ্ট করে লামা উপজেলা জেলা হওয়ার সম্ভাবনাকে চিরতরে দাফন করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা বৃহত্তর লামা উপজেলাকে ভেঙ্গে সরইকে উপজেলা করার কথা চিন্তা করছে। এতে করে লামা জেলা হওয়ার যেসব যুক্তিক কারণ গুলো ছিল তা চিরতরে হারাবে এবং এই উপজেলাটি হবে বান্দরবানের সবচেয়ে ছোট উপজেলা।

সচেতনমহল মনে করছেন, সরইকে আগে উপজেলা করা হলে, লামাবাসির জেলা হওয়ার স্বপ্নকে চিরতরে কবর দিতে হবে। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, এই উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নটি আগে নিজেদের সাংগঠনিক উপজেলা দাবি করত। কিন্তু ফাইতং এলাকাটিকে আলাদা ইউনিয়ন ঘোষণা করার পর থেকে উপজেলা হওয়ার স্বপ্ন আজিজনগরবাসি চিরতরে ভুলে গেছে। তেমনি একটি চক্রান্ত লামা উপজেলার জন্য করা হচ্ছে মর্মে ধারনা করছেন বিজ্ঞমহল। লামাকে জেলা করার পর সরইকে উপজেলা করা হলে কোন আপত্তি থাকবেনা বলে মনে করছেন এই অঞ্চলে বসবাসরত দুই লক্ষাধিক জনসাধারণ।

অত্র অঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নকে ধ্বংস করে সরইকে স্বতন্ত্র উপজেলা করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য স্মারক নং- ০৫.৪২.০৩৫১.৩০৫.০৮.০০২.২০১৭- ১১১৫ মূলে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ইং এক গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু। গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে আগামী ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ইং বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সরই ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সর্বস্থরের লোকজনের উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে লামা জেলা বাস্তবায়ন কমিটি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, লামা উপজেলা থেকে আরো ৪টি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে আরেকটি উপজেলা হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তৎকালীন বৃহত্তর রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত থানা ছিল লামা। বর্তমান লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নিয়ে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয়েছিল সাবেক মহকুমা লামা। মহকুমার প্রথা ১৯৮৪ সালে বাতিল করে লামাকে পুণরায় উপজেলা করা হয়। তখন লামাকে ভেঙ্গে লামা সহ ৩টি নতুন উপজেলা করা হয়। আর সেই উপজেলা গুলো হলো লামা, আলীকদম ও নাইক্ষংছড়ি। লামার আয়তন ছোট করার প্রথম ধাপের পর অর্থাৎ ৩৩ বছর পর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন কেটে আরেকটি উপজেলা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আমি মনে করি এই মুহুর্তে সরই ইউনিয়নকে উপজেলা করার মত কোন যুক্তিক কারণ নেই। বৃহত্তর ও জনবহুল লামা উপজেলাকে দিখন্ডিত করা উচিত হবেনা।

লামা উপজেলা পরিষদের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ বিষয়ে আমাকে কোন মহল থেকে জানানো হয়নি।

সরই ইউনিয়নকে উপজেলায় উন্নীত করার বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, আগামী ২৮ ডিসেম্বর সরই উপজেলা গঠনের বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জনমত জরিপের বিষয়ে মত-বিনিময় সভায় অধিকাংশ জনগণ যেদিকে মত দিবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: