ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

উজাড় হচ্ছে বাঁশ, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

baskorolবান্দরবান প্রতিনিধি ::

পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রিয় সবজি বাঁশ কোড়ল (কচি বাঁশ)। পাহাড়ে জন্ম নেয়া বাঁশের অঙ্কুরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বাঁশ কোড়ল। সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদু তাই বাঙালির খাদ্যর তালিকায়ও যুক্ত হয়েছে এটি। অঙ্কুর থেকে বাঁশে পরিণত হওয়ার আগেই পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে প্রতিদিন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে এটি। বাঁশ কোড়ল নিধন রোধে স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় দিন দিন এটি নিধন বেড়েই চলছে।

বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং সবজির তালিকায় কচি বাঁশ সংযুক্ত হওয়ায় দিন দিন বাঁশ হ্রাস পাচ্ছে। পার্বত্যঅঞ্চলে বাঁশের উপর নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছিল দেশের বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা পেপার মিল। বাঁশ ও কাঁচা মালের অভাবে প্রতিনিয়ত বন্ধ থাকতে হয় দেশের বৃহৎ পেপার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটিকে। একদিকে উজাড় হচ্ছে বাশঁ অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

সূত্র মতে, গত ৫ বছরে জেলার ছয় কোটিরও বেশি বাঁশ অঙ্কুরেই স্থানীয়রা সাবাড় করেছে। এভাবে বাঁশকোড়ল নিধন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাঁশ সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বন বিভাগ জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে মিতিংঙ্গা, মুলি, টেংরা, দুলু, কালী ও ছোটিয়াসহ আরো কয়েক প্রজাতির বাঁশ জন্মায়। বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাঁশের বংশ বৃদ্ধি হয়। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বাঁশ কোড়ল দিয়ে সবজি ছাড়াও বিশেষ ধরনের স্যুপ তৈয়ার করে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাঁশ কোড়ল।

বান্দরবান পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাশ জানান, বাঁশ কোড়ল পাহাড়িদের প্রিয় খাবার। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা কিছু করতে পারি না। তবে বাঁশ কোড়ল কাটা বন্ধ করতে পারলে যেমন দেশে বাশেঁর চাহিদা মেঠানো সম্ভব হবে তেমনি সরকারের রাজস্বের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

জেলা সদরের বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রেতা জানান সুইম্যাচিং ও মেম্রাউ জানান, সপ্তাহের দুই হাটবারে ২০০ থেকে ২৫০টি বাঁশ কোড়ল বাজারে বিক্রি করেন তারা। এই দিয়েই চলে সংসার। প্রতি আঁটিতে থাকা ১০-১২টির কোড়লের মূল্য ৩০-৬০ টাকা। এদের মতো স্থানীয় আরও অনেক পাহাড়ি নারী সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত জুম চাষ, পানির উৎসস্থলগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং পাহাড় থেকে নতুন বাঁশের কোড়ল সংগ্রহ করে সবজি হিসেবে ব্যবহার করায় বাঁশের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পাহাড়ে বাঁশ সংরক্ষণে সরকারের এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আদিকাল থেকে বাঁশ কোড়ল পাহাড়িদের জনপ্রিয় খাদ্য। ইদানিং বাঙালিদের খাবার তালিকায় বাঁশ কোড়ল স্থান করে নেয়ায় বাঁশ সম্পদ ঝুঁকির মধ্য পড়েছে।

পাঠকের মতামত: