ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আলীকদমে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে পাথর উত্তোলন চলছে

SAMSUNG CAMERA PICTURES

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ::

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও তৈন রিজার্ভ এর বিভিন্ন ছড়া, ঝিরি ও খাল হতে পাথর উত্তোলনের আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তথ্য গোপন করে ২টি রিজার্ভ এলাকা হতে ২০ হাজার করে ৩টি আবেদনে ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলনের আবেদন করেছে আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, নয়া পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা ও লামা ফাঁসিয়াখালী এলাকার পাথর ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির।

সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে কোনভাবেই পাথর আহরণ করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন, লামা-আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ। তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে ৩টি পাথরের পারমিটের বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে আমরা সরজমিনে তদন্ত করে দেখেছি। আবেদিত স্থান সমূহ আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতরে পড়েছে। তাই উল্লেখিত স্থান হতে পাথর তোলার যাবেনা বলে আমরা লিখিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীকদমের দপ্তরে দাখিল করেছি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামাল উদ্দিন মাতামুহুরী নদীর শাখা ঝিরি ছোট বুঝি, কালাইয়ার ছড়া ঝিরি থেকে ২০ হাজার ঘনফুট, ফোগ্য মার্মা রোয়াম্ভু খালের নুন ঝিরি ও কেয়াং ঝিরি হতে ২০ হাজার ঘনফুট ও জনৈক হুমায়ুন কবির নামে লামা ফাঁসিয়াখালী এলাকার এক ব্যবসায়ী উপজেলার ২৮৭নং তৈন মৌজার ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠান্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির শাখা প্রশাখা থেকে ভাসমান ২০ হাজার ঘনফুট পাথর পারমিট পেতে আবেদন করেছেন। আবেদনে উল্লেখিত স্থান সমূহ বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে হলেও তারা কৌশলে তা গোপন রাখে। এইসব আবেদন গুলো অনুমোদন দেয়া হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সহ এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হবে জানায় বসবাসরত উপজাতি বাঙ্গালীরা। মোটা টাকা লেনদেনের বিনিময়ে ভূমি অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার এর দেয়া ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে পারমিট হাতিয়ে নেয় ব্যবসায়ীরা। তারপর ভাসমান পাথরের কথা বলে চলে পাহাড় কেটে পাথর আহরণ।

আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ২০ হাজার ঘনফুট পাথরের আবেদন করেছি। অনুমোদন পেতে পাথর সংগ্রহ করা হবে। এদিকে পাথর উত্তোলনের অনুমোদন হাতে না পাওয়ার আগেই উক্ত এলাকা হতে পাথর আহরণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ছোট বুঝি, কালাইয়ার ছড়া, রোয়াম্ভু খালের নুন ঝিরি ও কেয়াং ঝিরির বড় ভরি, ঠান্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির এলাকার লোকজন। নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে আলীকদম সদরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দিনে রাতে শতাধিক গাড়ি দিয়ে ৬/৭ শত গাড়ি পাথর অবাধে পাচার হচ্ছে। স্থানীয় প্রসাশন কেউ কিছু বলছেনা। সবাই নিরবতা পালন করছে। এই পাথর আহরণ, পরিবহন ও উত্তোলন করতে গিয়ে প্রভাবশালী মহল পরিবেশের বারটা বাজাচ্ছে। এতে করে কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নষ্ট হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ধূলাবালির কারণে স্থানীয় লোকজন বায়ুবাহিত নানান রোগে আক্তান্ত হচ্ছে।

সরজমিনে গেলে দেখা যায়, মাতামুহুরী নদীর শাখা ঝিরি ছোট বুঝি, কালাইয়ার ছড়া ঝিরি, রোয়াম্ভু খালের নুন ঝিরি ও কেয়াং ঝিরি, আলীকদম-থানচি সড়ক, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া সড়কের পথে পথে পাথরের স্তুপ, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ভরিখাল, কলারঝিরির শাখা প্রশাখা, রেপারপাড়া এলাকার ডপ্রু ঝিরি, চিনারি দোকান এলাকার ভরিমুখ ও মমপাখই হেডম্যান পাড়া থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই নির্বিচারে পাথর আহরণ করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এইসব পয়েন্টে কমপক্ষে লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর মজুদ করা হয়েছে। পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সখ্যতার কারণে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে জানায় স্থানীয়রা।

পরিবেশবাদী কয়েকজন জানান, মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন নামমাত্র পাথর জব্দ করে নিলাম দেয়। নিলামের কাগজে পাথর পরিবহনের সময়সীমা অযুক্তিক ভাবে দীর্ঘ করে দেয়া হয়। এতে করে উক্ত নিলাম গ্রহিতারা এই কাগজ প্রদর্শন করে নিলামের ২০ গুণ পাথর নিয়ে যায়। পাথর পাচার বন্ধ করতে হলে পাথর নিলাম বন্ধ করা অতীব প্রয়োজন।

এবিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আবেদন গুলো আমরা যাচাই বাচাই করছি। বন বিভাগ জানিয়েছে উল্লেখিত স্থান সমূহ তাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, কয়েকটি আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মধ্যে কোন পাথরের পারমিট অনুমোদন দেয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত: