লামা প্রতিনিধি :: বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদী ও লামাখাল, পোপা খাল ও বমু খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গত ২৪ঘন্টায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে লামা বাজারসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা।
এদিকে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের শতাধিক স্থানে পাহাড় ধসে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সাথে উপজেলা সদরের সাথে আলীকদম উপজেলা এবং রূপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গুলোতে আনা হয়েছে।
পানিতে সড়কের ৬টি স্থানে তলিয়ে যাওয়ায় লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বর্ষণে লামা উপজেলার এ পর্যন্ত শতাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা পৌরসভার বাজার এলাকা, নয়া পাড়া, ছোট নুনারবিল, বড় নুনারবিল, চেয়ারম্যান পাড়া, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, চোররবিল, মধুঝিরি, লাইনঝিরি, শিলেরতুয়া, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লা পাড়া, পুকুরিয়া খোলা ও দরদরী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
প্রচুর বৃষ্টিপাত থাকায় বন্যার পানি বেড়ে অবস্থার অবনতি হওয়ার ২৪ ঘন্টা পর পানি নামতে শুরু করেছে বলে জানান লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম। বন্যায় দূর্গতদের রাতে দিনে ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। তা স্বাভাবিক অবস্থা না ফিরা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
এদিকে পৌর এলাকার অনেক সড়ক ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা বলেন, টানা বর্ষণে ইউনিয়নের পুকুরিয়া খোলা ও দরদরী বড়ুয়া পাড়া এলাকা সহ ৩০টির অধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পুকুরিয়া খোলা গ্রামে পাহাড় ধসে মোঃ শাহারাজ বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সে পুকুরিয়া খোলার আব্দুল মোতালেব এর ছেলে।
একইসময় ইউনিয়নের লামা রূপসীপাড়া সড়কের দরদরী বড়ুয়া পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে রাস্তার উপরে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এবারের বন্যায় গ্রামীন সড়ক গুলো ভেঙ্গে চুরে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রফিক বলেন, বুধবার রাত ২টায় লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড নারকাটা ঝিরি মসজিদের পাশে মৃত জমির আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন ও আবুল কালামের বসতবাড়ির উপর পাহাড় ধসে পড়েছে। এছাড়া এই ওয়ার্ডের ২৫টির অধিক বাড়ি পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত। লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রন্ত আবুল কালামের বসতবাড়ি।
লামা পৌরসভার লাইনঝিরি মোড়ে রাস্তার পাশের একটি বড় রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়ে ৩৩ হাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে যায় ও ২টি বিদ্যুতের খুঁটি হেলে যায়। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করছে বিদ্যুৎ কর্মীরা। গাছটি কেটে সড়ক যোগাযোগ সচল করেছে লামা ফায়ার সার্ভিস।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বগাইছড়ি ব্রিজটির গাইডওয়াল ভেঙ্গে ব্রিজের ফাটল ধরেছে। এখনি মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ব্রিজটি ভেঙ্গে যেতে পারে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি লামার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, উপজেলার সব চেয়ে জনবহুল ইউনিয়ন হলো আমার ইউনিয়ন। ছোট বড় ৬০ শতাংশ সড়ক ভেঙ্গে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান চকরিয়া নিউজকে জানান, দ্রুত দুর্যোগ কমিটির সভা করে দূর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী ও সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, পাহাড় ধস ও বন্যার যে কোন সংবাদ পেলেই আমরা উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ছুটে যাচ্ছি। জরুরী ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারের লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজা রশিদ চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, বৃহস্প্রতিবার বিকেল থেকে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এখনো আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে আশ্রিত দূর্গত মানুষদের খাদ্যসহায় চলমান রয়েছে। তবে বন্যায় উপজেলায় কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কয়েকদিন পর তা সম্পূর্ণ জানা যাবে।
পাঠকের মতামত: