ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

লামায় জেলা পরিষদের ইজারাদার কর্তৃক অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

লামার সরই ইউনিয়নে বান্দরবান জেলা পরিষদের আওতাধীন ইজারাদার কর্তৃক অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। অভিযোগে অতিরিক্ত ও জোর পূর্বক টোল আদায়, টোল আদায়কালে রশিদ না দেয়া, ইজারাদার কর্তৃক টোল আদায়ের বিবরণী হিসাব সাইনবোর্ড হিসেবে প্রদর্শন করার কথা থাকলেও না করে মনগড়াভাবে টাকা আদায় এবং গায়ের জোর বা ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার অনিয়ম গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ী মো. সেলিম জানান, ইজারাদার মো. দিলশান ও জামাল উদ্দিন পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। তারা ইজারা নেয়ার পর থেকে সরকারী নিয়মনীতি না মেনে অতিরিক্ত টোল করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হয়রাণীর শিকার হতে হয়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনা।

সরই এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মো. বদিউল আলম, ইদ্রিস, আব্দুর রহিম ও রেজাউল করিম বলেন, একছড়ি কলা আনলেও তাদের টোল দিলে হয়। টোল নেয়ার সময় টাকার রশিদ চাইলে তারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সরকারী টোল আদায়ের চার্ট দেখাতে বললে তারা দেখায় না। টোল আদায়ের পয়েন্টে টোল আদায়ের হিসাব বিবরণী সাইনবোর্ড আকারে প্রদর্শন করার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। অসহায় দরিদ্র উপজাতি বাঙ্গালীরা সাপ্তাহিক হাটের দিন সামান্য কিছু মালামাল নিয়ে আসলে তারা অতিরিক্ত টোল নেয়ার কারণে বাজারের কৃষকের উপস্থিতি কমে গেছে। এতে করে প্রকৃত মালের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের অত্যাচারে বাজারে গরু, ছাগল বেচাবিক্রি কমে গেছে। চড়া টোল আদায়ের ভয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের উৎপাদিত শস্য, সবজি, গাছ, বাশঁ, ফলমুল, গরু, ছাগল বাজারে আনা বন্ধ করে দিয়েছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ঠকাচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ি আব্দুর রশিদ ও জসিম উদ্দিন জানান, তারা নিয়মিত পাইকারি দামে সবজি কিনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তু কৃষি পণ্য কিনে আসার পথে জেলা পরিষদের নিয়োগকৃত ইজারাদাররা ব্যবসায়িদের কাছ থেকে নির্ধারিত পরিমানের ২ থেকে ২০ গুন বেশী টোল আদায় করে আসছেন। এ নিয়ে কোন ব্যবসায়ি বা কৃষকরা প্রতিবাদ করলেই গালিগালাজ, হুমকি, মারধর সহ নানা প্রকার নির্যাতন করে।

ব্যবসায়ি মহিউদ্দিন জানান, সবচেয়ে বেশী টোল আদায় করছেন বান্দরবান জেলা পরিষদের ইজারাদার মো. দিলশান ও জামাল উদ্দিন। সবজি এবং হাঁস, মুরগী, গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে আসা ব্যবসায়িরা এদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।

অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা পরিষদের আওতাধীন টোল আদায়কারী (ইজারাদার) মো. দিলশান জানান, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ্য মিথ্যে। ব্যবসায়িদের কাছে যতটুকু মালামালের টোল নিচ্ছেন তার রশিদ দিচ্ছেন। তবে কর্মচারীরা অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে ব্যবসায়ি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে দূর্ব্যবহার করেছেন বলে শুনেছেন।

সরই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদ-উল আলম জানিয়েছেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমাকে অনেকে বলেছে। আমরা বললেও ইজারাদাররা কর্ণপাত করেনা। অতিরিক্ত টোল আদায় করার জন্য তারা টোল আদায়ে হিসাব চার্ট লাগাইনি। সাধারণ মানুষ হররাণী হচ্ছে।

এবিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আবচার বলেন, কোন পণ্য হতে কি পরিমাণ টোল আদায় করবে তার হিসাব ইজারাদারদের দেয়া হয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত টোল আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: