নিজস্ব প্রতিবেদক :: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় তিনটি ইটভাটায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে ও বনে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী হচ্ছে। রাতদিন ব্রিকফিল্ডগুলোর চুল্লিতে জ¦লতে সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন পাহাড় থেকে আহরণ করা লাকড়ি। এ উপজেলার তিনটি ইটভাটারই লাইসেন্স নেই বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলীকদমে স্থাপিত তিনটি ইটভাটার কোনটারই বৈধতা নেই। আইনে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। অথচ আলীকদমের ৩টি ইটভাটার অতিকাছেই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন সড়ক!
তারপরও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চলছে প্রতিবছর অবৈধ ইটের ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি আহরণ ও লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরী করা হয়। বিগত ক’বছরে উপজেলা পরিবেশ ও বন কমিটির সভায় ব্রিকফিল্ডগুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে কাগজে-কলমে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। কিন্তু তদারকি কর্তৃপক্ষ কুম্ভকর্ণের তন্দ্রাবিলাসে থাকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব পালং পাড়া ও আমতলী এলাকায় ২টি ও তারাবুনিয়ায় ১টি ইটের ভাটা রয়েছে। এসব ইটের ভাটায় কোনদিনই কয়লা পুড়নো হয়নি। পুরো সিজন ধরে পোড়ানো হয় বনের লাকড়ি। সেক্ষেত্রে সরকারি বন ও প্রাকৃতিক সৃষ্ট বনের কাঠ নির্বিচারে কাটা হয়।
অপরদিকে, পাহাড় কেটে লাকড়ি পরিবহনের রাস্তা তৈরী করা হয়। পাশাপাশি ব্রিকফিল্ড এলাকায় সরকারিভাবে তৈরী করা গ্রামীণ সড়কগুলোতে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সারাবছরই সেসব রাস্তা ক্ষতবিক্ষত থাকে। ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙ্গে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠে। রাস্তাঘাট ধুলায় একাকার হয়ে সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়।
ইটের ভাটায় অবৈধভাবে আহরিত লাকড়ির যোগান দিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠা হয়েছে কথিত ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি। এ সমিতির মাধ্যমে প্রতিমন লাকড়ি প্রতি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তোলা হয়। সে চাঁদার ভাগ যায় বিভিন্ন ঘাটে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না’। এ আইন অমান্য করলে ‘অনধিক ৩ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন’ মর্মে এ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে।
অপরদিকে, এ আইনের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে ‘জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল ব্যবহার করা যাবে না’।
এছাড়াও ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করা যাবে না’ মর্মে এ আইনে উল্লেখ আছে।
আইন অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্যকোন স্থানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা।
এ আইনের ৮ ধরার ৩ (খ) উপধারায় উল্লেখ আছে, ‘বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে ২ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাইচার বলেন, ইটভাটাগুলো নিয়ম মেনে লাইসেন্স নিলে সেক্ষেত্রে বন বিভাগের মতামতের প্রয়োজন আছে। আলীকদমের ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স নেই। যদি সরকারি বনের কাছাকাছি হয়ে থাকে তবে সেসব ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পাঠকের মতামত: