ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

করোনা প্রভাবে কমেছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ::  ঈদুল আজহাকে ঘিরে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। কিন্তু চলতি বছর কিছুটা উল্টোপথে হাঁটছে কোরবানের অত্যাবশকীয় পণ্য মসলার বাজার। পাইকারি বাজারে গত তিন মাস ধরে মসলার দাম কমতির দিকে রয়েছে। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি থাকার পর পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে দাম কমতির দিকে রয়েছে। কারণ করোনার প্রভাবে বেচাকেনা খুবই কম। তারল্য সংকটের কারণে দাম কমছে।
কোরবানের প্রধান অনুষঙ্গ গরম মসলা থেকে শুরু করে আদা, রসুন পেঁয়াজের দাম কমতি রয়েছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে সব ধরনের পণ্যের দাম কমেছে।
মসলা আমদানিকারক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে তিন মাস ধরে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কমতি রয়েছে। এ অবস্থা যদি আরও কয়েক মাস স্থায়ী হয় লোকসান গুনে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ^বাজারের চেয়ে অনেক কম দামেও পণ্য বেচাকেনা করতে হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা দরে। গত কয়েক দিন আগে তা তিন শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রোজায় বিক্রি হয়েছিল ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশে পণ্যটি বেশি আমদানি করা হয়। ভারত, রাশিয়া, চায়না থেকে বেশি পরিমাণ জিরা আমদানি করতে হয়।
এলাচি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৪শ থেকে ২৫শ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে তা ২৭শ-২৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের আগে অর্থাৎ তিন মাস আগে তা ৩৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এলাচি আমদানি হয় গুয়েতেমালা ও ল্যাথিন আমেরিকা থেকে। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর থেকেও এলাচি আমদানি করা হয়। তবে এসব দেশ এলাচি উৎপাদনকারী দেশ নয়। তৃতীয় দেশ হিসেবে রপ্তানি করে থাকে।
লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৪০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে ৬৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। রমজান মাসে ৭২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। লবঙ্গ আমদানি বেশি হয় শ্রীলংকা থেকে।
জায়ফল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪শ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে তা ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রোজায় বিক্রি হয়েছিল ৭শ টাকা দরে। জায়ফল আমদানি বেশি হয় ভারত ও চায়না থেকে। তবে আরও কয়েকটি দেশ থেকে জায়ফল আমদানি করা হয়। দারুচিনি বেশি আমদানি হয় চায়না থেকে। গতকাল দারুচিনি বিক্রি করা হয়েছে কেজিতে ২৬০টাকা দরে। গত সপ্তাহে পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ৩শ টাকা দরে। যত্রিক বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫০ টাকা দরে। আগে তা বিক্রি হয়েছিল ৭৫০ টাকা দরে।
একইভাবে কমেছে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও মরিচের দাম। ভারত থেকে আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৬০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে তা ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। দেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে দুইশ টাকা দরে। তা বিক্রি হয়েছিল ২৪০ টাকা দরে।
মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামেও স্বস্তি রয়েছে। বর্তমান বাজেটে পেঁয়াজ আমদানির উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর কথা ছিল। দেশি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পেঁয়াজের দাম উত্থান-পতনে রয়েছে। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ১৫-১৭ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। এখন তা কমে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯-২০ টাকা। মধ্যমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। নি¤œমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে। আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে তা ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৫ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে তা ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। রমজান মাসে তো আদা, রসুনের দাম উর্ধ্বগতি ছিল।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘প্রচুর আমদানি রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা কম। এসব কাঁচা পণ্য বেশিদিন মজুত রাখা যায় না। আমদানি বেশি হওয়ার পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম কমতির দিকে রয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্য দেড় মাস আগের এলসি করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে ভ্যাট আরোপিত হয়নি। এছাড়াও আমদানি বেশি রয়েছে। সেই তুলনায় ক্রেতা কম। তাই দাম পড়তি রয়েছে।’
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোনার প্রভাবে ঈদুল আজহায় মসলাজাতীয় পণ্যের প্রভাব পড়বে না। বেচাকেনা কম থাকায় প্রতিটি পণ্যের দাম কমতি রয়েছে। ঈদের মতো মতো হচ্ছে ঈদুল আজহায় মসলার বড় ব্যবহার কমে আসবে। তাই আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তারুল্য সংকটের আশঙ্কা করছেন। তাই পড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

পাঠকের মতামত: