ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিদের ওপর কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের নিত্যনৈমত্তিক হামলা

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশহ এশিয়ানদের ওপর কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হামলা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই শহরের কোথাও না ও কোথাও বাংলাদেশিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দেওয়ায় এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
গত ১০ দিনে নিউ ইয়র্কের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় তিন বাংলাদেশি কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী আব্দুল কাদির হামলার শিকার হয়েছেন ব্রুকলিনে তার কর্মস্থলে। ২০ বছর বয়সী দিলশাদ তাজ হামলার শিকার হয়েছেন এলমহার্স্টে এবং জাহেদুল কাদের হামলার শিকার হয়েছেন জ্যাকসন হাইটসে। অন্যদিকে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর বাংলাদেশ সুপার মার্কেট এবং গ্রোসারিগুলোতেও কৃষ্ণাঙ্গরা নির্বিঘ্নে হামলা চলাচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশের আইন সংশোধিত হওয়ার কারনেই প্রতিনিয়ত এসব হামলার ঘটনা ঘটছে বলে প্রবাসীদের অনেকেই মনে করছেন।
আব্দুল কাদির স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় এসেছিলেন। আমেরিকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্রুকলিনের একটি সাবওয়ের দোকানে কাজ করেন। আব্দুল কাদির জানান, গত ২১ মে তিনি ৫৩০ কনডিট ব্লুবার্ড ব্রুকলিনের একটি সাবওয়েতে কাজ করছিলেন। রাত ১১টার সময় তিন জন কৃষ্ণাঙ্গ তার দোকানে ঢোকে। দোকানে ঢুকেই বলে তাদের অর্ডার আছে, তা দেওয়ার জন্য। এই সময় আব্দুল কাদির বলেন, আপনাদের কোনো অর্ডার নেই। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা আব্দুল কাদিরের ওপর হামলে পড়ে। তারা সঙ্গে রাখা স্টিল দিয়ে আব্দুল কাদিরের মাথায় আঘাত করে এবং হাতে আঘাত করে। হামলা করেই পুলিশ ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্সে করে আব্দুল কাদিরকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। আব্দুল কাদের জানান, তার মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং হাত ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তারা এসেছিল পরিকল্পনা করে আমার ওপর হামলা করার জন্য। কারণ তারা জানতো তারা কোনো অর্ডার দেয়নি। আব্দুল কাদির আরো জানান, আগামী সপ্তাহে আমার এক্সরে করা হবে, তখন জানা যাবে হাত ঠিক আছে কি না। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না, পুলিশ ভিডিও ক্লিপসহ সবকিছু নিয়ে গিয়েছে। আব্দুল কাদেরের দেশের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে।
একই সপ্তাহে দিলশান তাজ হামলার শিকার হয়েছেন এলেমহার্স্ট হাসপাতালে যে পার্কিং আছে সেখানে। তিনি থাকেনও ওই এলাকায়। জানা গেছে, দিলশাদ তাজ সন্ধ্যার দিকে তার কাপড় লন্ড্রিতে দিয়ে দুই বন্ধু মিলে পার্কের ভিতরে বসে গল্প করছিলেন। এই সময় কয়েকজন স্প্যানিশ এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে তার বন্ধু ছুটে চলে যায়। কিন্তু লুঙ্গি পরা ছিলেন যে কারণে পালাতে পারেননি। তার ওপর হামলা চালিয়ে স্প্যানিশ দুর্বৃত্তরা তার মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ডাকলে কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে, কিন্তু তার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
আরেক বাংলাদেশি জাবেদুল হক কাদের হামলার শিকার হয়েছেন জ্যাকসন হাইটসের কাবার কিংয়ের সামনে। দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালিয়ে তার মানিব্যাগ এবং অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ঘটে রাতের বেলায়। পুলিশ আসার আগেই কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের ঘুসিতে জাবেদুল কাদেরের একটি চোখে প্রচ-ভাবে আঘাত পান। হাসপাতালে কয়েকদিন অবস্থানের পর তিনি বর্তমানে বাসায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে রাতের বেলায় কখনো একা চলাফেরা করা উচিত নয়। কাজ না থাকলে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত। এ পরিস্থিতিতে রাতে একা একা চলাফেরা করাও নিরাপদ নয় বলে প্রবাসীদের সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পাঠকের মতামত: