বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন (২৭)। বিল্লালকে গ্রেফতারের পর সোমবার রাতে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর কারওয়ান বাজারে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালএর আগে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীর নবাবপুরের ‘দি-নিউ ঢাকা বোডিং আবাসিক হোটেল’ থেকে বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০ এর একটি দল। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর দায়ের করা মামলার পাঁচ নম্বর আসমি সে।
গাড়িচালক বিল্লালের বরাত দিয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, বনানী থানায় ভিকটিমরা মামলা করার পর বিষয়টি আসামিরা অনলাইনে জানতে পারে। তখন আসামি সাফাত, সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী আজাদ ওরফে রহমত আলীকে গাড়িতে নিয়ে চালক বিল্লাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দিকে যায়। সেখানে তারা একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করার পর গাজীপুর হয়ে মাওনা দিয়ে সিলেটে চলে যায়। সাফাত ও সাদমান সাকিফ সিলেটে সাফাতের নানাবাড়িতে থাকে। সাফাতের দেহরক্ষী আজাদ ও গাড়িচালক বিল্লাল একটি রিসোর্টে থাকে। পরবর্তীতে দেহরক্ষী আজাদ রিসোর্ট থেকে চলে যায়। বিল্লাল নিজেও সিলেট থেকে ছাতক চলে যায়। সে ছাতক থেকে আবার সিলেট ও সিলেট থেকে রবিবার ভোরে ঢাকায় আসে। এরপর নবাবপুরের ওই হোটেলে সে সুজান নামে উঠে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘বিল্লাল আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ঢাকায় এসেছিলো। আইনজীবীর সঙ্গে সে কথাও বলেছে। কিভাবে কি করবে, সেসব পরামর্শ করেছে কয়েক দফা। এরমধ্যেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।’
সেদিন রেইনট্রি হোটেলে কী কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছে বিল্লাল। সে ভিকটিমদের গাড়িতে আনা-নেওয়ার কথাও জানিয়েছে বলে জানান র্যাব-১০ এই অধিনায়ক। তিনি জানান, বিল্লাল সবাইকে বিভিন্ন জায়গা থেকে হোটেলে এনে ভোর রাত ৪টার দিকে সাফাতদের বাড়িতে গাড়ি রেখে ফের রেইনট্রি হোটেলে ফিরে আসে। এরপর সাফাত তাকে হোটেল কক্ষে যেতে বলে। বিল্লাল কক্ষে যাওয়ার পর সাফাত তাকে কক্ষের বাথরুমে যেখানে ফলস পার্টিশন দেওয়া, সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে। এসময় ধর্ষণের ঘটনাটি সে ভিডিও করে। পরে সকালে একটি ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে দুই তরুণীকে বাসায় পাঠায় সাফাত। ঘটনার সবকিছু প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে গাড়িচালক বিল্লাল। আমরা আসামিকে তদন্তকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করবো, বলে জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃত বিল্লালের গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রামেশ্বরের দাঁড়িডোমায়। রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সে থাকতো।
উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বেসকারকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তারা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে তাদের বনানীর কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম।’ এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
পাঠকের মতামত: