ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
সোমবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এদিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নূরজাহান বেগমের মেয়ে রীনা ইয়াসমিন মিতি জানান, ৭ মার্চ দেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নারী সাংবাদিক নূরজাহান বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাঁর বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান বলেন, হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মায়ের মরদেহ পুরান ঢাকার শরৎ গুপ্ত রোডের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
গত ৫ মে অসুস্থ অবস্থায় নূরজাহান বেগমকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে গত ৭ মে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিনি চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরজাহান বেগমের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে রাষ্টপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন।
সাহিত্যক্ষেত্রে মেয়েদের এগিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কলকাতা থেকে বেগম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে এটি ঢাকায় চলে আসে। বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক ও নূরজাহান বেগমের বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। বেগম–এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। তবে চার মাস পর থেকেই পত্রিকাটির সম্পাদনা শুরু করেন নূরজাহান বেগম। বেগম-এর প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি। মূল্য ছিল চার আনা।
বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোকেয়া পদক পান। এ ছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।
পাঠকের মতামত: