ইলিশের ভর মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে অকাল দেখা দেওয়ায় মহেশখালীর অসংখ্য ফিশিং বোট খালি ফিরেছে শ্রমিকেরা চরম হতাশায় ভুগছেন। পক্ষকাল ধরে শতাধিক বোট মহেশখালীর জেঠি ঘাট, সোনাদিয়া, ধলঘাটা, মাতারবাড়ী ও কক্সবাজার শহরের ফিশারী ঘাট এলাকায় নোঙ্গর করে অলস বসে রয়েছে জেলেরা। এতে করে বোট মালিকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। এছাড়া হাজার হাজার মাঝিমাল্লারা পড়ে গেছে চরম বেকায়দায়। বোট মালিকদের দাবী সাগরে ব্যাপক হারে ট্রলি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাদার ফিস সহ ব্যাপক হারে ঝাটকা নিধন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সাগর থেকে ফিরে আসা মাঝি মাল্লাদের সাথে আলাপকরে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার উপকুলীয় এলাকা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন ৪ হাজার ছোট বড় ফিশিং বোট সাগরে মাছ শিকারে যায়। এ কাজে জড়িত রয়েছে প্রায় ৬০/৭০ হাজার মাঝিমাল্লা। জীবন জীবিকার তাগিদে এরা জীবনের চরম ঝুঁিক মাথায় নিয়ে ছুটে যায় গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে। যাওয়ার সময় এক একটি ফিশিং বোটে ৭-১০ দিনের জন্য ৭০-৮০ হাজার টাকার চাল, ডাল, তেলসহ রসদপত্র নিয়ে যায়। সাগরে মাছ শিকারের পর এরা ফিরে আসে চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার শহরের ব্যস্ততম মাছের বাণিজ্যিক এলাকা ফিশারী ঘাট (পল্টন) এলাকায়। শতশত বোট প্রতিদিন এখানে নোঙ্গর করে ইলিশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পল্টনেই বেচাঁ বিক্রি করে আসছে। তবে গত কয়েক দিন ধরে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা পল্টনে আগের মতো নেই ব্যবসায়ীদের কোলাহল। ক্রেতা বিক্রেতাদেরও ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পৌরসভার এলাকার মাঝি নুরুল ইসলাম জানায়, গত পক্ষকাল ধরে সাগরে মাছের আকাল চলছে। যেখানে একটি বোট দুই থেকে ৩/৪ লাখ টাকার মাছ শিকার করতো বর্তমানে সেখানে ৮/১০ হাজার টাকার ঝাটকা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। মাঝিমাল্লারা আরো জানান, বর্তমানে সাগরে ব্যাপক হারে দেশী বিদেশী ট্রলি জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার আশংকা জনক হারে বেড়ে যাওয়ায় মা মাছ ও ঝাটকা নিধন হচ্ছে ব্যাপক হারে। এছাড়া বর্তমানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চাপ্পা নামের থাইল্যান্ডের তৈরী এক ধরণের জাল। এ জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়ে ভয়াবহ বলে জানান।
বোট মালিকরা জানান, মাঝে মাঝে পুলিশ, নৌ বাহিনী অভিযান চালিয়ে কারেন্ট জাল উদ্ধার করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কতিপয় স্ব-স্ব উপজেলার মৎস্য অফিস ষ্টাফেরা কারেন্ট জাল ও ট্রলি জালের মালিকদের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ব্যবহার জিইঁয়ে রেখেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার পূর্বে বিভিন্ন দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সমুদ্রে পাঠানোর পর খালি বোটে ফিরে আসায় তারা চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। মাছ শিকারে জড়িত হাজার হাজার মাঝিমাল্লা বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের সংসারে নেমে এসেছে দুর্দিন। মৎস্যজীবীদের দাবী পরিবেশ বিধ্বংসি কারেন্ট, ট্রলিও চাপ্পা জাল সাগরে একেবারেই ব্যবহার নিষিদ্ধ কড়াকড়ি করা না হলে সাগর মৎস্য শূন্য হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার মৎস শ্রমিক।
পাঠকের মতামত: