কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)-এর পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। গতবছরের ১৭ জুলাই মতিয়ার রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেও সম্প্রতি তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ায় বিষয়টি সবার নজরে আসে। অস্ত্র প্রশিক্ষণের সময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান এম এ জলিল তার অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেকের নির্জন এলাকায় শিক্ষক মতিয়ার ও বিসিএস ক্যাডার আজিজুল হক মামুনকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিবুল ইসলাম সজিব।
তখন মতিয়ার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগের মামুন সোহাগ-নাজমুল কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। ওই সময় তাদের প্রশিক্ষণের ছবি সহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নেতা সজীবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুবকে ইবি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
এদিকে ঢাবির একটি সূত্র জানিয়েছে, মতিয়ারের রেজাল্ট ভালো না হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। জানা গেছে, ছাত্রলীগের একসময়ের দাপুটে নেতা মতিয়ারকে নিয়োগ দিতে প্রত্যক্ষ তৎপরতা চালায় সিলেকশন বোর্ডের কিছু সদস্য। তবে এনিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ ছিল। ওই সময় মতিয়ারের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করা আরো সাত শিক্ষকজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে সিন্ডিকেট তা অনুমোদন করেন। ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগে এক সঙ্গে এতো শিক্ষক নিয়োগ একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি‘র সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে জানান, এ অভিযোগ আমরা আগে কখনো শুনিনি। এখন খোঁজ নিচ্ছি।
বিতর্কিত ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সেই পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ জলিল গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে এমন কোনো রেকর্ড নেই। তা ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা আমার এখতিয়ারের বাইরে।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মতিয়ার সম্পর্কে এই কথাগুলো গত সাত আট মাসে শুনিনি। সিলেকশন বোর্ড কি বিষয়গুলো অবগত ছিলেন না? আগামীকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ নিব।
এ বিষয়ে মতিয়ার রহমানের সঙ্গে বুধবার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
পাঠকের মতামত: