ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

উপকূলীয় বদরখালী-বাগগুজারা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন 

জহিরুল আলম সাগর, বদরখালী থেকে ফিরে ::
চকরিয়ায় কয়েকদফা ভয়াবহ বন্যায় ও বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ও অস্বাভাবিক ভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির তোড়ে উপজেলার উপকূলীয় কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন। এছাড়াও সড়ক ভেঙে হাজারো খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল ও যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী।

বর্তমানে সড়কটির বেহাল দশা পরিলক্ষিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে এলজিইডি কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোন নজরদারী নেই। ভয়াবহ বন্যায় একের পর এক অভ্যান্তরীণ জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি ডেমুশিয়া ও কোনাখালীর একাধিক পয়েন্টে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীতে বিলিন হতে চললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর নদীর ভাঙন রোধ থেকে সড়কটি রক্ষায় নেয়নি কোন ধরণের উদ্যোগ।ফলে সড়কের ভাঙা স্থান দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে জনসাধারণ। ইতোপূর্বে এ সড়ক নিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলে ও এখনো টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট হয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত যান চলাচল উপযোগী থাকলেও কোনাখালীর বাঘগুজারাস্থ মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত সেতু থেকে বাংলাবাজার হয়ে বদরখালী বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষেই সড়কটি চলে গেছে। যার ফলে প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের অন্তত ১কিলোমিটার পর্যন্ত অভ্যান্তরীণ এ সড়ক নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ। বিগত ৫বছর ধরে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া পুরো সড়কের একাধিক স্থানে বড় বড় খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে যাত্রীদের।

এতেই যান চালক-যাত্রীদের বেশি সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে ডেমুশিয়াস্থ ছয়কুড়িটিক্কার টেক ও কোনাখালী ইউনিয়নের ছড়াপাড়া, সিকদার পাড়াস্থ কাইদ্যারডিয়া ও বাংলাবাজার এলাকার পশ্চিমে সড়কের অর্ধেকাংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পরিণত হয় সড়কটি। এসব স্থানে সড়ক একেবারে সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন ভাঙ্গন ও খানা খন্দকের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সম্পূর্ণ যান চলাচল। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উপজেলার উপকূলীয় কোনাখালী, ডেমুশিয়া ও বদরখালীসহ তিন ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক জনসাধারণ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপকূলীয় কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী এ সড়কটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত মাতামুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে এ বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার জন্য বিগত ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে দুই দফায় সড়কটিতে কার্পেটিং ও ঢালাই এর কাজ করে চলাচল উপযোগী করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির মেরামত ও সংস্কার কাজে কেউ এগিয়ে না আসায় এ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে । এরই মধ্যে বিগত সময়ে একাধিক বার ভয়াবহ বন্যায় সড়কটি ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে আরও চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে সড়কটি।

কোনাখালী এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম চকরিয়া নিউজকে জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কম করে হলেও প্রায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।কিন্তু সড়কটি দ্রুত মেরামতের ব্যাপারে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বিভাগ কোন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মাঝে এক ধরণের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ ৯বছর ধরে সড়কের বড় ধরণের কোন সংস্কার কাজ না করায় দিন দিন সড়কটি চলাচল অযোগ্য হয়ে বেহালদশায় পরিণত হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দ্রুত সময়ে সংস্কার করতে সচেতনমহল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দোকানপাট ও মাছের ঘের নির্মাণ করায় নদীতে পানির প্রবাহ বাঁধার মুখে পড়ে। এতে একদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এবং অপরদিকে অস্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের পানির তোড়ে সড়কটি বার বার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০০৪ প্রথম দফায় সড়কটিতে পিচ ঢালাই দেওয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর পর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া হয় পিচ ঢালাই। কিন্তু বিগত ১০ বছরের একাধিক ভয়াবহ বন্যা এবং অস্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারে সড়কটির অধিকাংশ স্থান বিলিন হয়ে নদীতে তলিয়ে যায় সড়ক।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চকরিয়া নিউজকে জানান, কোনাখালীর বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি মূলত আমার ইউনিয়নের রক্ষাকবচ। এটি বর্তমানে যানবাহন চলাচলের সড়ক হলেও একসময় ছিল নদীর বেড়ীবাঁধ। বিকল্প চলাচলের সুবিধার্থে এটিকে সড়কে রূপান্তর করেন এলজিইডি বিভগ। কিন্তু প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে সড়কটি নদীতে বিলিন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এনিয়ে কোন ধরণের মাথাব্যথা নেই। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজারো জনসাধারণ। ঘটছে নানা দুর্ঘটনাও। সড়কটি মেরামতের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বেশ কয়েকবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে অবহিত করার পরও এখনো নেয়নি কোন ধরণের উদ্যোগ।

চকরিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় (এলজিইডি) কর্মকর্তা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল চকরিয়া নিউজকে জানান, নদীতে তলিয়ে যাওয়া ও বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাঘগুজারা সেতু থেকে বদরখালী পর্যন্ত সড়কটি দ্রুত মেরামতের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে।

তবে সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ছিল। নদীর তীরবর্ত্তী ভাঙ্গনকৃত স্থান সমূহ পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত মেরামত করলেই এলজিইডি দপ্তর থেকে সড়ক মেরামতের কাজ বিলম্ব হবেনা বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: