ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘বদি, মৌলভী মুজিব আছে নে?’

কালের কন্ঠ ::  কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের সর্বত্র এখন একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সাধারণ মানুষ একে অপরের কাছে জানতে চাচ্ছে ‘বদি, মৌলভী মুজিব আছে নে?’

অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা তালিকার এক নম্বরে থাকা ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহমান বদি ও তার ভাই সীমান্তের ইয়াবা সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক মৌলভী মুজিবুর রহমান থাকছেন কিনা।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তালিকায় শীর্ষে নাম থাকলেও তারা ধরাও পড়ছে না এবং আত্মসমর্পণও করছেন না। তাদের মতো সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি রয়েছেন যারা এখনো পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

আজ সোমবার টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা কারবারিদের দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণ হতে চলছে। জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি তোফায়েল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিকাল ৩টায় টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন (বিপিএম বার) কালের কণ্ঠকে জানান, ‘বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারি মাদকের পথ পরিহার করার সংকল্পে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হয়েছেন। তাদের সংখ্যা ২০/২৫ জন হতে পারে। তারা আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবেন।’

ইয়াবা কারবারিদের দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণের তালিকায় থাকা ইয়াবা কারবারিরা ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তালিকায় কারা রয়েছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ‘ইয়াবা তালিকার শীর্ষে থাকা সাবেক এমপি বদি, তার ভাই মৌলভী মুজিব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ গডফাদাররা আত্মসমর্পণ করছেন না কেন?

সাধারণ মানুষের অভিমত, এসব শীর্ষ গডফাদরদের আত্মসমর্পণের আওতায় আনা হলে টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবার নাম নেওয়ার লোক থাকবে না। এরাই মূলত এখনো সীমান্তে টিকে থাকা ইয়াবা পাচারকারীদের সাহসের খোরাক।’

এদিকে টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা কারাবারিদের প্রথম আত্মসমর্পণ হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেখানে সাবেক এমপি বদির চার ভাইসহ ঘনিষ্ট ১৬ আত্মীয় ছিল। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও পৌরসভার কাউন্সিলর ছিল সাতজন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীও ছিল।

পুলিশ সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা তালিকায় কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আছেন ৭৩ জন। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করেছেন মাত্র ২৪ জন। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা টেকনাফ শিলবুনিয়া পাড়ার সাইফুল করিম গতবছর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলেও ওই তালিকার বেশির ভাগই আত্মসমর্পণ করেনি এখনো।

আত্মসমর্পণ করা ১০২ জন ইয়াবা কারবারির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল তিন লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের সবার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এদের মধ্যে জেলে থাকা অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলে বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে গত ২০ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের ৪ মে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারে নিহত হয়েছে ২১১ জন। তাদের মধ্যে দুই নারীসহ ৬২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: