শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :: শাহপরীর দ্বীপ। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ সীমান্তের নাম। কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই দ্বীপটির অবস্থান। দ্বীপে বসবাসকারী ৪০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে বেশির ভাগেরই জীবিকার প্রধান উৎস মাছ ও লবণ চাষ। ২০১২ সালে প্রবল জোয়ার আর পরে ঘুর্ণিঝড়ে দ্বীপ রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় জীবিকা নির্বাহের এসব উৎস। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্বীপটি আরো বিধ্বস্ত হয়। এতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, গাছপালা বিলিন হয়। এখন দ্বীপের চারপাশে শুধুই বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। গত প্রায় ৮ বছর ধরে দ্বীপ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙে গেছে। এই সড়কে একটি ব্রিজ ও কয়েকটি কালভার্ট ধ্বসে পড়ে। যে কারণে দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে গত ৮ বছর ধরে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। তবে এবার শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ আশার আলো দেখছেন। ভোগান্তি থেকে মুক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন।
মুজিববর্ষ-২০২০সালের প্রথমদিনেই টেকনাফ শাহপরী দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের দীর্ঘ ৮ বছরের ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। মুল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের সংস্কার কাজ শুরুর মধ্যদিয়ে মুজিববর্ষের শুভ সুচনা করেছে সওজ। আর এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যয়ে ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল-আমিন কনস্ট্রাকশন ও এমএএইচ কনস্ট্রাকশনের কাছে কার্যাদেশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
সওজ কক্সবাজার কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এর মাঝে সাবরাং হারিয়াখালী-শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক ২০১১ সালের শেষের দিকে জোয়ারের তোড়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়। কাপেটিং উঠে গিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া সড়কের কারণে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালে সড়কটি সংস্কারের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে ৫৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে চুড়ান্ত অনুমোদন হয়। তারই অনুকূলে মুজিববর্ষের শুরুতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসীর ভোগান্তি রোধে সড়ক নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কটি পর্যটন ও সীমান্ত বাণিজ্য বিকাশের সাথে জড়িত। সড়কটি মেরামত সম্পন্ন হলে স্থলপথে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন পৌছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। সড়ক চালু হলে শাহপরীর দ্বীপ জেটি হতেই পর্যটনবাহী জাহাজগুলো ছাড়া হবে। এ জেটি দিয়েই সহজে পৌছাবে মিয়ানমার থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য। কিন্তু সড়কটির স্থায়িত্ব উজানে অবস্থিত পাউবোর বেড়িবাঁধের উপর নির্ভরশীল। নানা দূর্যোগে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়তি দূর্বলতা রয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে শাহপরীর দ্বীপ সড়ক নির্মাণ কাজ হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএএইচ কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ৫ কিলোমিটার ভাঙ্গা অংশ সংস্কার দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ দ্বীপবাসী। এটা গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। তাই সবদিক বিবেচনা করে ৪০ হাজার মানুষের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সড়কটির নির্মাণ দ্রুত শেষ করার প্রচেষ্টা থাকবে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, শাহপরীর দ্বীপে ৪০ হাজার মানুষের বাস। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় কোনো রকমে পাঁচ কিলোমিটার পার হয়ে মূল অংশে উঠতে হয়েছে। কিন্তু শুকনো মৌসুমে সেই সুযোগও থাকতো না। দীর্ঘ ভোগান্তির এ সময়ে নৌকাডুবির ঘটনায় এ অংশে ১৩ শিশু মারা গেছে। এখন কাজ শুরু হয়েছে জেনে সবার মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ছে।
শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা সোনা আলী বলেন, ভাঙ্গা এ সড়কে দ্বীপের মানুষ ৮ বছর কষ্ট পেয়েছে। অবশেষে সড়কটি নির্মাণ শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসী খুবই আনন্দিত।
পাঠকের মতামত: