নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানীযোগ্য খাত চিংড়ি শিল্প ধ্বংসে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। নানা বাধা-বিপত্তি ও জটিলতায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে জেলার সাড়ে ১৩শ’ চিংড়ি চাষী। অদৃশ্য কারণে চিংড়ি জমি নবায়ন হচ্ছে না, খাজনাও নিচ্ছে না। যার কারণে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকাল ১১ টায় কক্সবাজার মোটেল রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে কক্সবাজার জেলা চিংড়ি খামার গ্রুপের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
জেলা চিংড়ি খামার গ্রুপের সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওন এর সভাপতিত্বে ও মাওঃ মোহাম্মদ খালেদ সাইফীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কক্সবাজার জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, জ্যৈষ্ট সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, চকরিয়া চিংড়ি খামার মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ সেলিম উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দলিলুর রহমান, বিশিষ্ট রাজনীতিক ইউনুচ বাঙ্গালী, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইফুর রহিম শাহীন, বিশিষ্ট পরিবেশ সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার বলেন, চিংড়ি চাষীদের কাছ থেকে খাজনা গ্রহণ না করা মানে সরকারের সাথে প্রতারণা করা। আর প্রধান মন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাঁধা সৃষ্টি করা। ইজারা চুক্তি নবায়ন না করে ও দীর্ঘ সময় থেকে খাজনার টাকা গ্রহণ না করে চাষীদের বিপদে ফেলা হচ্ছে। কিন্ত সেই সুযোগ দেয়া যাবে না। দেশে আইন আদালত আছে, প্রয়োজনে আদালতের আশ্রয় নেয়া হবে। আর দীর্ঘ সময় পর খাজনা নেয়া হলে সুদ মওকুফ করতে হবে। খুলনা, সাতক্ষীরায় চিংড়ি জমির খাজনা প্রতি একরে ৫০০/-টাকা হলেও কক্সবাজারে তা ২,০০০/- টাকা। এই বৈষম্যও মেনে নেয়া যায় না। চিংড়ি চাষীরা এল,আর ফান্ড নামে কোন চাঁদা প্রদান করবে না। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি ঘের নিয়ে বর্তমানে উপকূলীয় বন বিভাগ অনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। তারা অদৃশ্য কারণে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ কেটে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। সদরের গোমাতলীতে ইঞ্জিনিয়ার সুজাউল আলমের চিংড়ি ঘের সহ বেশ কয়েকটি ঘেরে হামলা ও লুঠপাট চালিয়েছে, এক পর্যায়ে তারা ঘেরের বাঁধ ও কেটে দিয়েছে। তিনি এইসব হয়রানী বন্ধ না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কক্সবাজারকে গিলে খাওয়ার জন্য হায়েনারা মাঠে নেমেছে। কক্সবাজারের স্থানীয়দের নিজ দেশে পরবাসী করার জন্য নানা ভাবে জমি নিয়ে নেয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের চিংড়ি শিল্প, পর্যটন শিল্প ও লবণ শিল্প সু-কৌশলে ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রকৃত চিংড়ি চাষীদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র আমরা কোন দিন সফল হতে দেবনা। চিংড়ি শিল্পসহ কক্সবাজারকে বাচাতে প্রয়োজনে সবাই আন্দোলনে নামবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা চিংড়ি খামার গ্রুপের সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওন বলেন, চিংড়ি চাষীদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে কৌশলে খাজনা নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, নবায়নও করে দিচ্ছেনা। কেও খাজনা দিতে চাইলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হয়ে যায়। জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও খাজনা দিতে পারছেনা, পারছেনা নবায়ন করতে। ২০১৪ সাল হতে খাজনা নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের গেজেট মতে কক্সবাজার জেলায় মোট চিংড়ি জমির পরিমাণ ৩৪,৬৬৭.৭৮ একর। প্রতি একরে ২,০০০/-টাকা খাজনা নেয়া হলে এক বছরে ৭ কোটি টাকার মত সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো। সে হিসেবে ৬ বছরে ৪২ কোটি টাকা সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ খাজনা আদায় না করাতে সরকার যেমন কোটি টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে চাষীদের উপর বিশাল টাকার চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আরও বেশী উৎকন্ঠার কারণ হচ্ছে, চিংড়ি জমি নবায়ন ও খাজনা গ্রহণ না করে চাষীদের কাছ থেকে সু-কৌশলে চিংড়ি জমি কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হউকনাকেন চাষীদের কাছ থেকে এক ইঞ্চি জমিও কেড়ে নেয়া যাবেনা। ১৯৯৮-২০১২ সাল পর্যন্ত চিংড়ি জমির ইজারা চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। ২০১৩-২০১৪ সালে কিছু কিছু ইজারা চুক্তি নবায়ন করা হলেও অদৃশ্য কারণে এর পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। যা জেলার চিংড়ি শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। উপরন্তÍ চিংড়ি জমির লীজ বাতিলের ষড়যন্ত্র ও চলছে। যা কোন ভাবে মেনে নেয়া যাইনা। আলোচনা সভায় চাষীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কাজ¦ী আব্দুল মাসুদ (সদর), ছৈয়দুল হক সিকদার (মহেশখালী), অধ্যক্ষ মাওঃ কামাল হোছাইন (টেকনাফ), হামিদ মেম্বার (চকরিয়া), নুর মোহাম্মদ চৌধুরী পটু (চকরিয়া), মাওঃ আব্দুল্লাহ খাঁন (সদর), ফজলুল কাদের মেম্বার (সোনারপাড়া, উখিয়া) প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: