ঢাকা,বুধবার, ১ মে ২০২৪

রিফাত হত্যায় মিন্নিসহ আসামি ২৪ চার্জশিট দাখিল, জামিন আটকাতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন

নিউজ ডেস্ক ::  বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এ মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে রিফাত ফরাজীকে, যিনি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। আর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে করা হয়েছে ৭ নম্বর আসামি, যার নাম এ মামলার এজাহারে ছিল এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে। এছাড়া মিন্নিকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আটকাতে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন স্থগিতের এই আবেদন জমা দেওয়া হয়। এ আবেদনে ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’ হিসেবে সুফিয়া খাতুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া সুপ্রিম কোর্টের অবকাশে আপিল বিভাগের জরুরি বিষয় নিষ্পত্তির জন্য অবকাশকালীন বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১ সেপ্টেম্বর (গতকাল) থেকে ২০ সেপ্টেম্বর এবং বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর চেম্বার আদালতে শুনানি নেবেন। এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর (আজ সোমবার) বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত বসার কথা রয়েছে। মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি নিয়ে সেখানেই শুনানি হতে পারে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার মিন্নিকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয়।
হাই কোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, জামিনে থাকা অবস্থায় ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন। আর এই সময়ে মিন্নি গণমাধ্যমের সামনে কোনো কথা বলতে পারবেন না। ওই রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি বলেছিলেন, এ রায়ে আমরা মর্মাহত। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করবে।
গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার সময় তাকে বাঁচাতে তার স্ত্রী মিন্নির মরিয়া চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের করা মামলায় মিন্নি ছিলেন প্রধান সাক্ষী। কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। কিন্তু মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী সেদিন আদালতে দাঁড়াননি, যা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তরুণী হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতকের এই ছাত্রী পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। কিন্তু বিচারক সেটি ফেরত দিলে মিন্নির আইনজীবীরা জজ আদালতে যান। সেখানেও জামিন না মেলায় তারা হাই কোর্টে আবেদন করেন।
২০ অগাস্ট আংশিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে আদালত। সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা; গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘ সময় মিন্নিকে পুলিশ লাইনসে আটক রাখা এবং গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া; আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময় তার আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া; ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য; তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, সুতরাং আসামি কর্তৃক তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকায়; সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার ব্যতিক্রম, অর্থাৎ আসামি একজন নারী- এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেওয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি এবং জারি করা রুলটি আমরা যথাযথ ঘোষণা করলাম। সে তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে পারবে না।

পাঠকের মতামত: