ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘দোস্ত, আমার অবস্থা খারাপ’ -উখিংনু রাখাইন

ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসির ছাত্রী। তাঁর জন্য শোকবার্তা হাজির করলেন শুভ আনোয়ার

উখিংনুর হাসিমুখ আর দেখা যাবে না ক্যাম্পাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::  সমুদ্রস্নাত কক্সবাজারের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা উখিংনু ছিলেন প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ফার্মেসিতে প্রথম বর্ষে পড়তেন। আর কোনো দিন ফিরবেন না ক্যাম্পাসে! তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও সহপাঠী আফসানা মোস্তাক মীম কান্নাভেজা কণ্ঠে জানালেন, “২৬ তারিখেও ওর সঙ্গে কথা হলো ফোনে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি অবস্থা তোর?’ এর আগে, যখনই কেউ ওকে কুশল জিজ্ঞেস করলে মুখভরা হাসি নিয়ে জবাব দিত, ‘খুবই ভালো আছি।’ কিন্তু সেদিনই প্রথম বলল, ‘দোস্ত, আমার অবস্থা খুবই খারাপ।’ সাহস দিলাম। কে জানত পরের দিনই মারা যাবে সে!” মীম আরো জানালেন, ‘খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারত উখিংনু। ছিল মানসিকভাবে খুব শক্ত। ছিল সাহসের আধার। ১৭ তারিখে হল থেকে ওকে যখন আমরা এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, সেদিনও ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। কিন্তু জ্ঞান ফেরার আধা ঘণ্টার মধ্যেই এমনভাবে কথা বলছিল, যেন ওর কিছুই হয়নি; বরং আমরাই অসুস্থ! এমন মিশুক মানুষটি আর কোনো দিন ফিরবে না, ভাবা যায়?’

ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার কয়েক সপ্তাহ পরই জ্বর শুরু হয়েছিল উখিংনুর। জ্বর নিয়েই নিয়মিত ক্লাস করেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দিয়েছেন। কারো কাছে প্রকাশ করেননি অসুখের কথা। এরপর ধীরে ধীরে হাতে তীব্র ব্যথা শুরু হলে আর লুকাতে পারেননি। বন্ধুদের চাপে সাভারের এক বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করালে ধরা পরে ডেঙ্গু। যেদিন ধরা পড়ল, সে রাতেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে কয়েক বন্ধু তাঁকে নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন থাকার পর মা এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। ভর্তি করান কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। এরপর অবস্থার আরো অবনতি হলে চিকিত্সকের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল উখিংনুকে। মাঝরাস্তায়ই মৃত্যু হয় তাঁর। পরদিন দুপুর আড়াইটায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় রাখাইন শ্মশানে তাঁর সত্কারে হাজির হয়ে তাঁকে শেষ বিদায় দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ সহপাঠী ও বন্ধু।

তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ২৮ জুলাই সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। প্রতিটি হল ও বিভাগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, চিকিত্সাকেন্দ্রে রক্তের প্লাটিলেট পরিমাপক ডিভাইস (ডেঙ্গু শনাক্তকারী) স্থাপন, উখিংনুর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ পাঁচটি দাবি উপস্থাপন করেছেন তাঁরা।

চিকিৎসাসেবা ::

উখিংনুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে দেখা গেছে আতঙ্ক। চিকিৎসাকেন্দ্র্রে রক্ত পরীক্ষার জন্য উপচে পড়া ভিড়। এত দিন না থাকলেও ২৯ জুলাই রক্তের প্লাটিলেট পরিমাপক ডিভাইসটি এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সংযোজন করার কথা জানিয়েছেন প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. শামছুর রহমান।

পাঠকের মতামত: