মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কুতুবদিয়া থেকে ফিরে :: কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করেই খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন এক ইউপি সদস্য। অপরদিকে খবর পেয়ে সেই চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ বুধবার (৩জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সরকারি চাল খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ার খবর পেয়ে কুতুবদিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমা থানার ওসি মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউসকে সাথে নিয়ে বড়ঘোপ বাজারে অভিযান চালিয়ে আক্কাস স্টোর থেকে ৫৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করে দোকানটি সীলগালা করে দেন। তবে এসময় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দোকানের মালিক পালিয়ে যায়।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিদারুল ফেরদাউস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুতুবদিয়া উপজেলা সদরের বড়ঘোপ বাজারের আক্কাসের চালের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৫৪ বস্তা সরকারী চাল জব্দ করে এসিল্যান্ড সুপ্রভাত চাকমার নির্দেশে দোকানটি সীলগালা করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, দোকানের মালিক আক্কাসের ভাষ্যমতে, সে প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে মোট ৫ টন সরকারি চাল ক্রয় করেছে বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য নাছির মেম্বারের নিকট থেকে। সেখান থেকে ২টন চাল তিনি বিক্রিও করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কুতুবদিয়ার সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমা বলেন, সরকারি চাল খোলাবাজারের বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই দোকানে ৫৪ বস্তা সরকারি চাল পাওয়ায় দোকানটি সীলগালা করে রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আগামীকাল পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটের জন্য সদ্য সমাপ্ত অর্থ বৎসরে ৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয় বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিনকে। অভিযোগ উঠেছে, নাছির উদ্দিন মেম্বার প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করেই কুতুবদিয়া পিআইও অফিস থেকে পৃথক ডিও নিয়ে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে গত মাসের শেষের দিকে ৫ টন চাল উত্তোলন করে নিয়েছেন। তিনি ইতিপূর্বে ২ টন চাল একইভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। অর্থ বৎসর শেষ হয়ে যাওয়ায় তড়িগড়ি করেই গত মাসের শেষ দিকে পিআইও অফিস থেকে ডিও নিয়ে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে ইউনিয়ন কুতুবদিয়া বড়ঘোপ বাজারের আক্কাস সওদাগরের কাছে বিক্রি করে দেন। আর আজ ৩ জুলাই খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সেই চাল জব্দ করে দোকানটি সীলগালা করে দিয়েছেন। সরকারী নিয়ম মোতাবেক, কাবিখা প্রকল্পের চাল খোলা বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। কাবিখা প্রকল্পে কাজে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের বিপরীতে এসব চাল মজুরী হিসেবে প্রদানের নিয়ম রয়েছে।
এ ব্যপারে জানতে বড়ঘোপ ৮নং ওয়ার্ডের এমইউপি নাছির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটের জন্য ৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পরিষদের একটি বাথরুম করেছেন। তিনি চালগুলো বড়ঘোপ বাজারের আক্কাস সওদাগরের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। মাঠ ভরাট না করে পরিষদের বাথরুম কেন করেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।
পাঠকের মতামত: