ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পণ্যের মতো বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গারা

জসীম উদ্দীন, টেকনাফ ::   কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্যের মত বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গারা। যে কোন রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়া পাচারকারী দালাল চক্রের হাতে তুলে দিলে মিলছে নগদ জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। রোহিঙ্গাদের কেনার জন্য কোটি কোটি টাকায় নিয়ে বসে থাকেন অপর আরেকটি দালাল চক্র। তারা রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে জনপ্রতি আদায় করছে দুই থেকে তিন লাখ টাকা।

সাম্প্রতিক জিম্মি দশা থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণে হঠাৎ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মানবপাচার। বরাবরের মতই পাচারকারীদের টার্গেট সাগর পথে মালয়েশিয়া। এ ক্ষেত্রে পাচারকারীদের লক্ষ্য বরাবরই রোহিঙ্গা নাগরিক।

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শত শত রোহিঙ্গাদের আটক করেছেন। সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও পুরুষ। শিশুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে পাচারকারীরা এক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে সুন্দরী রোহিঙ্গা নারীদের।

পাচারকালে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গাদের উদ্ধার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে নেপথ্যে মূল নায়ক ও দালালরা।

খবর নিয়ে জানা যায়, এসব রোহিঙ্গাদের মাত্র ২০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ক্যাম্প থেকে বের করে আনছেন একটি দালাল চক্র। পরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময় পাচারকারী চক্রের কাছে তুলে দিচ্ছে এসব দালালরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য জানান, সে আগের দালাল চক্রগুলো আবারো সক্রিয় হয়ে এ মানব পাচার শুরু করেছে। যাদের কারণে ২০১৫ সালে শত শত মানুষ সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিল। তাদের কারোরই শাস্তি না হওয়ায় একেই ব্যক্তিরা আবারো এ মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

কক্সবাজারের কয়েকটি দালাল চক্র রোহিঙ্গা দালালদের সহযোগিতায় প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে শত শত রোহিঙ্গাদের বের করে নিয়ে এসে ১০থেকে ১৫হাজার টাকায় বিক্রি করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার পূর্বে কোন টাকা নগদ দিতে না পারলেও দালাল চক্র তাদেরকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছে। পরে জিম্মি করে ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজন থেকে ২থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের আবদু ছালাম নামের এক রোহিঙ্গা জানান, তার হাসিনা নামের এক মেয়েকে তিনি সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন। ওখানে গিয়ে তার বিয়ে হবার কথা রয়েছে। আবদু সালাম বলেন, দালালদের সঙ্গে কথা ছিল বিশ হাজার টাকায় তারা মালয়েশিয়া পৌঁছে দেবে। কিন্তু মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর তার মেয়েকে জিম্মি করে রেখে ২ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে তার কাছে। টাকা না দিলে হাসিনাকে তারা মেরে ফেলবে এমন হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শাহ আলম নামের আরেক রোহিঙ্গা জানান, তার ছোট ভাইকে দালালদের সঙ্গে কথা বলে ২০হাজার টাকায় মালয়েশিয়া পাঠিয়ে
ছিল তার পরিবার। কিন্তু মালয়েশিয়া যাওয়ার পর তাকে জিম্মি করে রাখে দালালরা। পরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ১ মাস পরে ছেড়ে দেয়া হয়।

শাহ আলম আরো বলেন, বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া তার ছোট ভাইয়ের কাছে তিনি শুনেছেন, ওখানে টাকা না দেয়ায় শত শত রোহিঙ্গাদের হত্যা করে মাঠি চাপা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার সাইফুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা পাচার ঠেকাতে সাগরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে কোস্টগার্ড। কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এটা খুবই শঙ্কার কথা। মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টি আরও ভয়ঙ্কর।এটি যদি আবারো ২০১৫সালে ন্যায় হয় স্থানীয়দের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ২০১৫ সালেও মালয়েশিয়া যাওয়া শুরু করেছিল। যেটা পরবর্তীতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রভাব পড়ে। যার ফলে অনেক বাংলাদেশি নিখোঁজ ও প্রাণ হারায়।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন পাচারকালে রোহিঙ্গাদের আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। চেকপোস্টে তল্লাশি আরও বাড়ানো হয়েছে। এসময় তিনি দালাল চক্রের পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দালালদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: