ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ও অমাবস্যার জোয়ারে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধিতে কুতুবদিয়া উপকূলের ৫০ গ্রাম প্লাবিত

আবু আব্বাস সিদ্দিকী, কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) :: 
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ও অমাবস্যার জোয়ারে কারনে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৬/৭ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বেড়ীবাঁধ টপকিয়ে ও ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ দিয়ে কক্সবাজারের উপকূল কুতুবদিয়া দ্বীপে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় প্রায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসময় সমুদ্রের লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক কাঁচা ঘর বাড়ী, শত শত একর লবন মাঠের উৎপাদিত লবণ, আমান ফ পাকা ধান, ছোট বড় প্রায় ৫শত মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে তাৎক্ষনিক ভাবে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুচ ছাফা বি.কম, কুতুবদিয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবু জাফর সিদ্দিকী, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারন সম্পাদক মিজবাহুর রহমান তুহিন প্রমুখ।

এব্যাপারে ইউএনও দীপক কুমার রায় চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্লাবিত এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে শুকঁনো খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও আরো জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলা প্রশাসন বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং আজকেও প্লাবিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর চকরিয়া নিউজকে বলেন, পূর্বে থেকে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক থাকায় জানের তেমন ক্ষতি হয়নি মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা চকরিয়া নিউজকে জানান, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর,আনিচের ডেইল, সাইড পাড়া, কিরন পাড়া, তেলি পাড়া, বায়ু বিদ্যুৎ , জেলেপাড়া, কাহারপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়াও বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজাখালী,আজম কলোনী, কৈয়ারবিল ইউপির চেয়ারম্যান জালাল আহমদ জানান, মলমচর,উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, সিকদার পাড়া, মফজল ডিলার পাড়া,দক্ষিণ ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধূরী জানান, বাতিঘর পাড়া, উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ,স,ম শাহরিয়ার চৌধূরী জানান, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, ফয়জানিরবাপের পাড়া, চুল্লার পাড়া, পিল্লার পাড়া, মিয়ার কাটা, পূর্ব নয়াকাটা, উত্তর সতর উদ্দিন, লেমশীখালী ইউপির চেয়ারম্যান আলহাজ আকতার হোছাইন জানান, পেয়ারাকাটা, সতর উদ্দীন, ক্রসডেম বিসিক এলাকায় জোয়ারের নোনা পানি ডুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পশ্চিম তাবলরচর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোঃ আক্তার চকরিয়া নিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর অমাবশ্যার জেয়ারের প্রভাবে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবু জাফর সিদ্দিকী চকরিয়া নিউজকে বলেন, কুতুবদিয়া উপকূলের কৃষকেরা বুঝতে পারেনি এভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে চলে আসবে। জোয়ারের প্রভাবে উপকূলের কৃষক ও লবণচাষীদের কোটি কোটি টাকার ফসল ও লবণ নষ্ট হয়েছে। দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁেধর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান চকরিয়া নিউজকে বলেন, পূর্বে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাধ ভাঙ্গা ছিল। বিগত দুই বছর পূর্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় একশ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও যথাসময়ে কাজ করেনি। তবে বেশী ভাঙন এলাকায় জোয়ার রক্ষার জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে জোয়ার ঠেকানোর জন্য কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পশ্চিম তাবলরচর এলাকা ভাঙন বাঁেধ জরুরী ভিত্তিকে জোয়ার ঠেকানোর জন্য মাটি দিলেও তা ঘূর্নিঝড় ফণী ও অমাবশ্যার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তা তলিয়ে গেছে।

পাঠকের মতামত: