ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

একজন ভাল চিকিৎসক হতে হলে তাকে প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে -ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয় দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ ভুটান। ১৯৯১ সালে ২৮ তম ব্যাচে ভুটানের ছাত্র লোটে শেরিং বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাশ করার পর ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। হাঁ আমি বর্তমান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাক্তার লোটে শেরিং এর কথা বলছি। দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত অভিজ্ঞতায় তাঁর মন্তব্য একজন চিকিৎসক হতে হলে প্রথমে তাকে ভালো মানুষ হতে হবে -এ কথাটি আমার মনকে নাড়া দিল। তিনি যথার্থই বলেছেন। আজ যেমন আমাদের দেশের ভালো মানুষের অভাব ঠিক তেমনি ভালো মনের অধিকারী চিকিৎসকেরও অভাব।

মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা একটি মৌলিক অধিকার। শারীরিক ও মানসিক ভাবে মানুষকে পূর্বের ন্যায় সচ্ছলতা ফিরিয়ে দেয়াই হলো চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য। অসহায় মানুষকে সেবা করা প্রকৃত ধর্ম। রোগী সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ডাক্তারকে আশীর্বাদ করলে সেই আশীর্বাদ স্রষ্টার কাছে পৌঁছে যায়, আমার বিশ্বাস। বর্তমানে যেমন ভালো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে ঠিক তেমনি ভালো ডাক্তারের সংখ্যাও কমে গেছে। এখানে আমি ভালো ডাক্তার বলতে ভালো মনের মানুষকে বলছি।

মানুষ শব্দের উৎপত্তি মান ও  হুঁশ শব্দ দুটি যুক্ত । মান অর্থ আত্মসম্মানবোধ এবং হুঁশ অর্থ বিবেক যার আছে সেই প্রকৃত মানুষ । অন্য প্রাণী থেকে  যে গুনগুলো মানুষকে আলাদা করেছে তা হলো স্নেহ-মমতা, সহযোগিতা ,সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ক্ষমা, ত্যাগ, দয়া সাধুতা, সমদৃষ্টি, সৌজন্যে ও কল্যাণ চিন্তা ইত্যাদি। মানুষ মানুষকে ভালবাসবে ,মানুষের অধিকার দিবে ,মানুষকে সম্মান করবে এটাই হচ্ছে মনুষ্যত্ব। এই মনুষ্যত্ব প্রতিটি ডাক্তারের থাকা উচিত। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং এই ধরনের ডাক্তারদের কথা বলেছেন।

আমাদের দেশের  ডাক্তারদেরকে সাধারণ জনগণ কসাই বলে আখ্যা দেয়। তার কারণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদেশের মাটিতেও আমাদের দেশের চিকিৎসকের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে কিন্তু সে সুনাম এখন আমাদের দেশের জন্য দুর্নাম হয়ে আছে। কারণ আমাদের নিজের দেশের ডাক্তারা সেবা দিতে ব্যর্থ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। কোন রোগী যদি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে যায় তাহলে প্রথম সাক্ষাৎকারে ৪০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। তারপর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা , কফ পরীক্ষা, প্রস্রাব- পায়খানা পরীক্ষা , কোলেস্টেরল পরীক্ষা ,ডায়াবেটিস পরীক্ষা ইত্যাদি। ডাক্তাররা অনেকগুলো পরীক্ষা দেয় যা অযথা ও অপ্রয়োজনীয়।যার বিল আসে (৪০০০-৬০০০) হাজার টাকা পর্যন্ত। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয় (৬-১০) ধরনের ঔষধ যার মূল্য  (২০০০-৩০০০) টাকা সর্বনিম্ন। এখন চিন্তা করে দেখুন সাধারণ একজন রোগী যদি ডাক্তারের কাছে যায় কি পরিমাণ টাকা তার খরচ হয়। তার উপর আবার এক মাস পার হয়ে গেলে আবার পূর্বের নেই টাকা দিতে হয়। আপনি যদি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন মালিকরা সবাই ডাক্তার সাহেব। তার মানে ভিজিট নিয়ে তাঁদের পোষায় না রোগীকে নিয়ে তাঁরা ব্যবসায়ী করে। তাই নয় কি! এত টাকা খরচ করেও যদি চিকিৎসার সুফলটা পাওয়া না যায়, তাহলে বলুন ডাক্তার কে কি ভালো মানুষ বলা যাবে। রোগীর রোগ হয়েছে একটা, আর চিকিৎসা করতেছে অন্য রোগের। তারা কি বুঝে করে ; নাকি না বুঝে করে আমার বোধগম্য নয়। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করা হয়। অনেক ডাক্তার মৃত রোগীকে আই.সি.ইউ.তে রেখে জীবিত আছে বলে রোগীদের কাছে থেকে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় যা মানুষের মনুষত্ববোধ কি বিসর্জন দেয়। রোগিকে আর্থিকভাবেও মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। ডাক্তারের উপর বিশ্বাস হারিয়ে বাধ্য হয়ে রোগীদের কে আজ দেশের বাইরে যেতে হয়।  ভারতের চেন্নাই এ শতকরা ৭০ ভাগ রোগী হচ্ছে বাংলাদেশের।এটি আমাদের ডাক্তারদের জন্য তথা দেশের জন্য লজ্জাজনক। তাই নয় কি! তবে কিছু কিছু ভাল ডাক্তার আছে তাদের কে আমি বিনম্রশ্রদ্ধা করি। আগে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনতাম ডাক্তার রোগীর চেহারা দেখলে বুঝে যেত রোগীর কি হয়েছে ।একটি দুটি ওষুধ দিয়ে দিলে রোগী ভালো হয়ে যেত। রোগীর সাথে ভালো ব্যবহারে রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যেত। যিনি রোগীর রোগ বুঝেন তিনি অল্প ওষুধ দিয়ে থাকেন। যে ডাক্তার টাকার পিছনে ঘুরে সে ভালো মানুষ হতে পারে না। বর্তমান সরকার ডাক্তারদেরকে বলেছেন সপ্তাহে অন্তত একটা দিন গ্রামে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু গরিব ও সাধারন জনগনের কথা কে বা চিন্তা করে। বর্তমান ডাক্তাররা সেবা নই, টাকায় যেন মুখ্য উদ্দেশ্য। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা লব্ধ উপলব্ধি হাসপাতলে চিকিৎসা সেবিকার( নার্স) কার্যক্রম যেন ডাক্তার চেয়ে বড় ডাক্তার।অশালীন ব্যবহার ,টাকা ছাড়া যেন কাজ করতে চায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

তরুণ এম.বি.বি.এস. শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার মিনতি মানব সেবার ব্রতী নিয়ে যদি আসেন তাহলে সাধুবাদ। আর যদি ব্যবসায়িক চিন্তা করে এ পেশায় আসেন তাহলে না আসাই ভাল। রোগীদেরকে আর কষ্ট দিয়েন না, দেশকে আর লজ্জিত করবেন না। টাকার উপর লোভ করে আপনি মানুষের অন্তরেও স্থান পারবেন না , কিংবা সৃষ্টিকর্তার কাছে অবস্থান পাবেন না। আর যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে না হয়। বিবেকানন্দের কথাটি মনে পড়ে “জীবে প্রেম  করে যেজন ,সেজন সেবিছে ঈশ্বর”। প্রতিটি ডাক্তারের এই ব্রত হওয়া উচিত। তাই ডা. লোটে শেরিং এর ভাষায়, আমিও বলছি , ডাক্তারদের শুভবুদ্ধির উদয় হউক, যাতে ডাক্তাররা ভালো মানুষে পরিণত হয়। ডাক্তারদের মনে যেন মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হউক -এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

পাঠকের মতামত: