ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩০০ বিদেশি এবং ৬০০ গাড়ি

টেকনাফ প্রতিনিধি ::

টেকনাফ ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবতার সেবার নামে ১৩ শতাধিক বিদেশী নাগরিক বিচরণ এবং ৬ শতাধিক বিভিন্ন গাড়ি চলছে বলে জানা গেছে। “রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানে স্বচ্ছতা চাই” দাবীতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সহায়তায় জয়েন্ট রেসপন্স প্লান ২০১৯-এর আওতায় স্থানীয়করণ ও দদ্ব নিরসনে দলিলের সংবেদনশীলতার যৌক্তিকতাসহ বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা হয়।
জানা যায়, সোমবার ১১ ফেব্রæয়ারী সকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় কাজ করছে এমন ৫০টি স্থানীয় এনজিও এবং সুশীল সমাজ সংগঠনের নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) জেআরপি ২০১৯ রোহিঙ্গা সহায়তা পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) কর্তৃক পরিকল্পনাটি তৈরি হয়েছে স্থানীয় সরকার ও এনজিওদের অংশগ্রহণ ছাড়াই। এটি দন্ধ বা সংঘাতের প্রতি সংবেদনশীল নয়। এতে প্রাপ্ত সহায়তার স্বচ্ছতা এবং স্থানীয়করণ নিশ্চিত করার সুযোগ খুবই সীমিত।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিসিএনএফ-এর কো-চেয়ারম্যান ও কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজার-এর সমন্বয়কারী অশোক সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিসিএনএফ-এর সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে দদ্বময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে দদ্ব বা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে, কিন্তু জেআরপি ২০১৯ সাধারণ পরিসেবা চালিয়ে যাওয়ার মতো খুব গতানুগতিক পরিকল্পনা নিয়েই এগুতে চাইছে। এই ধরনের পরিকল্পনায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সামাজিক সম্প্রীতি নিশ্চিত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই মিশন এই ত্রাণ কর্মসূচির স্থানীয়করণ নিশ্চিত করা এবং সমগ্র সমাজভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার উপর ২৪টি পরিমাপক সুপারিশ করেছে। যা পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিভিন্ন অংগ প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর এ বিষয়ে খুব সামান্যই পরিকল্পনা ও উদ্যোগ রয়েছে। স্থানীয়করণ নিশ্চিত করার বিষয়ে বার-বার প্রতিশ্রæতি দিলেও জেআরপি ২০১৯-এ এই বিষয়ে মাত্র একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। যদিও জাতিসংঘ এবং অনেক আন্তর্জাতিক এনজিও স্থানীয়করণ সংক্রান্ত গ্রান্ড বারগেনের স্বাক্ষর করেছে’।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য প্রতি মাসে গড়ে বরাদ্দ এসেছে ৩৫১ ডলার, ২০১৭ সালে প্রতি পরিবারের গড়ে বরাদ্দ এসেছে ৫৯৩ ডলার। অর্থ প্রাপ্তির হার বর্তমান হারে, ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে কমতে থাকলে ২০১৯ সালে প্রতি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ২১৫ ডলারে নেমে যেতে পারে। ক্রমহ্রাসমান অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায় হলো প্রাপ্ত সহায়তার পূর্ণ স্বচ্ছতা। যাতে জনসাধারণ অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। এর পাশপাশি কার্যকরভাবে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। জাতিসংঘ সংস্থাগুলি এবং আইএনজিওকে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। এগুলোই স্থানীয়করণের মূল কথা। পরিকল্পিতভাবে স্থানীয়করণ ঘটাতে হবে। কেবল অর্থ সাহায্য কমে গেলেই তখন জোর করে এটা করা যাবেনা। রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে ১৩০০ জন বিদেশির কাজ করা এবং প্রায় ৬০০টি গাড়ি কি আসলেই প্রয়োজনীয় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থাগুলি এবং আইএনজিওগুলি উচ্চ বেতন কাঠামোর লাগাম টানতে হবে। এ ধরনের বেতন পরিচালন ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং মানব সম্পদ নিয়ে অস্থির এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। জাতিসংঘের সংস্থা ও আইএনজিওসহ আইএসসিজি-এর পরিচালন ব্যয়, রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য কত টাকা সরাসরি খরচ করা হচ্ছে সে বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করাসহ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার’।
সংবাদ সম্মেলনে সিসিএনএফ-এর পক্ষ থেকে একটি অবস্থানপত্র উপস্থাপন করা হয়। এতে ৬টি নির্দিষ্ট দাবি করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে (১) জাতিসংঘ সংস্থা এবং আইএনজিওগুলোর স্থানীয়করণের নীতিমালা প্রণয়ন, অংশীদার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে স্থানীয় এনজিওগুলিকে প্রাধান্য দেয়া। (২) তাদের বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য স্বার্থের অনুকুলে নীতিমালা গ্রহণ করা, যাতে তারা অংশীদারিত্ব প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারে। (৩) সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করা। (৪) রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নীতিমালা করা। ( ৫) যোগ্যতা এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ের এবং সেবা কর্মীদের ৭০ শতাংশ স্থানীয়দের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া (৬) সকল নিয়োগ স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে একটি নৈতিক নিয়োগ নীতি এবং সাধারণ বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা। ##

পাঠকের মতামত: