শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার :: সাবেক এমপি বদির তিন ভাই, উপজেলা চেয়ারম্যানপুত্র, পৌর কাউন্সিলর, অর্ধডজন ইউপি সদস্যসহ ২৫ গডফাদার ও ৩৮ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী পুলিশ হেফাজতে এসেছে। তাদের রাখা হয়েছে জেলা পুলিশের সেফহোমে। সরকারি নির্দেশনা পেলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত কয়েক দিন ধরে বিশেষ গোপনীয়তায় এই ৬৩ মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। জেলা পুলিশের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সর্বশেষ তালিকায় কক্সবাজারে ইয়াবা গডফাদার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় ৭৩ জন। এর মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ১০ জন।
পুলিশ হেফাজতে রয়েছে ২৫ জন। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ৩৮ জন গডফাদার। বিশেষ করে কক্সবাজার শহর, চকরিয়া, মহেশখালী ও রামুর ইয়াবা গডফাদার এবং শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সেফহোমে যেসব ইয়াবা গডফাদার রয়েছে তারা হল- উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির তিন ভাই যথাক্রমে শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফিক, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান ও বদির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু এবং সাহেদ কামাল।
এ ছাড়া রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর ওরফে নুরশাদ, বিভিন্ন ইউনিয়নের অর্ধডজন ইউপি সদস্য। তারা হলেন- পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার ও শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার।
এ ছাড়াও রয়েছেন- আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলার পশ্চিম সিকদার পাড়ার ছৈয়দ আহমদ, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, পুরাতন পল্লান পাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মং সং থেইন প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জুবাইর হোসেন।
এই ২৫ গডফাদার ছাড়াও যে ৩৮ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সেফহোমে রয়েছেন তারা হলেন- হ্নীলা পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোছন, নাইটং পাড়ার মো. ইউনুচ, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়া পাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নতুন পল্লান পাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজির পাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নুর মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়া পাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইল পাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলী খালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইল পাড়ার মো. সাকের মিয়া, সাবরাংয়ের আলী আহমদ, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়া পাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজির পাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভী পাড়ার মো. আলী ও এই এলাকার আবদুল গনি।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ৫১ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১০ জন ইয়াবা গডফাদার। তারা হলেন- আকতার কামাল, একরামুল হক, শামশুল হুদা, ইমরান প্রকাশ পুতিয়া মেস্ত্রী, মো. কামাল, জিয়াউর রহমান, হাবিব উল্লাহ, মো. ইউচুফ জালাল বাহাদুর, মোস্তাক আহমদ মুছু ও বার্মাইয়া শামশু।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন বলেন, ইয়াবা নির্মূলে কক্সবাজার জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। যারা এর আগে পুলিশ হেফাজতে এসেছে তারা নিজের অপরাধ বুঝেই এসেছে। সুতরাং তাদের যেভাবে দেখা হচ্ছে পলাতকদের ওভাবে দেখার সুযোগ নেই।
পুলিশ সুপার বলেন, ইয়াবা গডফাদার কিংবা শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর কেউই আইনের আওতার বাইরে থাকতে পারবে না। যেভাবেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এখন অপরাধীরা যে সুযোগ পাচ্ছে, হয়তো সামনে তা নাও পেতে পারে। সুতরাং সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
পাঠকের মতামত: