নিউজ ডেস্ক ::
গত বছরের রোজার ঈদে নিজের দেশে পাড়া–মহল্লার প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোকের আয়োজন করে খাইয়েছিলেন গৃহিণী খদিজা খাতুন ও তাঁর স্বামী। কিন্তু আজকের ঈদের দিন দেশ থেকে বিতাড়িত খদিজা খাতুনের চোখে পানি। নিজের বাচ্চাগুলোর মুখেও খাবার জোটাতে পারেননি তিনি—কথা হয় উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শিবিরের এই শরণার্থীর সঙ্গে। মিয়ানমারের বলি বাজারে বেশ অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের গৃহিণী ছিলেন তিনি।
আজ শনিবার সারা দেশের মতো উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরেও উদ্যাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাঁর যাঁর নিজের সামর্থ্য মতো খাবার রান্না করেছেন। কোনো কোনো শিশু ঈদের নতুন জামা পেয়েছে। কেউবা পুরোনো সবচেয়ে ভালো জামাটা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
খদিজা খাতুন বলেন, ‘এত বড় ঈদের দিন নিজেদের খাবার কপালে জোটেনি। ছোট তিনটা বাচ্চা আছে তাদের কোনো নতুন কাপড় দিতে পারেনি। সরকারি বা কোনো এনজিও থেকে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পায়নি। তারপরও অন্তত পক্ষে যে দেশে আমরা বসবাস করছি, এ দেশের মানুষের দয়ার ওপর। তারা আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার বড় পরিচয় দিয়েছেন। আমরা অসহায়। সবাই নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।’খবর প্রথম আলোর
কষ্টের মধ্যে থাকলেও বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। শিশু–কিশোর থেকে শুরু বড়রা পর্যন্ত নিজেদের সবচেয়ে ভালো পোশাকটা পরেই নামাজ আদায় করেছেন। সকাল আটটায় উখিয়ার কুতুপালং ডি-ফোর মরকদ মসজিদে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। এই মসজিদে প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা ঈদের জানাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে রোহিঙ্গারা যাতে তাঁদের হারানো অধিকার ও ভিটেবাড়ি ফিরে পেয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন—এ কামনা করা হয়। এ সময় অনেকে জোরে জোরে কাঁদতে থাকেন।
সকাল নয়টার দিকে শতাধিক রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে ডি-ফোর এলাকার ভেতরেই মিছিল করেন। ওই সময় তাঁরা স্লোগান দেন, ‘আমরা আর বাস্তুহারা হয়ে থাকতে চাই না’, ‘আমরা আমাদের নাগরিক অধিকার ও যাবতীয় ধন–সম্পদ ফিরে পেতে চাই। তাহলে আমরা মিয়ানমারে চলে যাব।’
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন, ‘উখিয়া উপজেলায় এক হাজারের বেশি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের মধ্যে আনন্দের ভাব ছিল। এবং কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
পরে কুতুপালং ডি–ফোর ঘুরে দেখা যায়, শিশুরা একে অপরের সঙ্গে খেলায় মেতেছে। ডি-ফোর ও ডি-ফাইভ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য খোদ রোহিঙ্গারাই নাগরদোলার আয়োজন করেছেন। শিশুরা বেশ আনন্দ নিয়ে সেসব নাগরদোলায় চড়ছে।
এ সময় এক ঝুপড়ি ঘরের আরেক গৃহিণী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমার স্বামী বলি বাজার এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু ভিটেবাড়ি–ধনসম্পদ ছেড়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। এভাবে ঈদ হবে, জীবনে কখনো কল্পনাও করিনি। তারপরও খোলামেলাভাবে এখানে নামাজ আদায় করতে পারায় আমরা মহান আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ, ওই দেশে দুই–তিন বছর ধরেও মাইক দিয়ে আজান দেওয়া সম্ভব ছিল না।’
মিয়ানমারের মংদুর নাকফুরা এলাকার গৃহিণী ছিলেন মমতাজ বেগম। তিনি তাঁর বাচ্চা ও আত্মীয়স্বজনের আপ্যায়নের এক কেজি সেমাই রান্না করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই। গত বছর রুটি ও গরুর মাংস রান্না করেছিলাম। ওই খাবার আমার বাচ্চাদের খুব পছন্দ। তবে এবার বাচ্চাদের জন্য কষ্ট করে এই সেমাই রান্না করেছি।’ তিনি জানান, তাঁর স্বামী পাহাড় কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কিছু টাকা পেয়েছিলেন। তাই দিয়েই ঈদের রান্না করেছেন তিনি।
পাঠকের মতামত: