ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ জুড়েই “ক্রসফায়ার” আতংক

অর্পন বড়ুয়া, টেকনাফ থেকে ফিরে :

সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে কথিক বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের দুই জন প্রতিনিধি একরাম ও আকতার কামাল নিহতের ঘটনায় সীমান্ত শহর টেকনাফ জুড়ে বিরাজ করছে অন্যরকম আতংক। মাদক বিরোধী অভিযানে নিয়োজিত র‌্যাব ও পুলিশের অব্যাহত টহলে আতংকিত হয়ে পড়েছে এখানকার স্থানীয় জনসাধারণ। অন্যদিকে ইয়াবার টাকায় গড়া সুরম্য প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়েছে ‘ইয়াবা রাজা’ খ্যাত মাদকের গডফাদাররা।

ইয়াবার স্বর্গরাজ্য টেকনাফের সাবরাং, নাজির পাড়া ও মৌলভী পাড়া ঘুরে দেখা যায়, চারিদিকে সুনশান নীরবতা। মানুষের চোখে-মুখে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। ইয়াবার বিরুদ্ধে সহজে মুখ খুলতে চায় না কেউই। স্থানীয় যে কয়েক জনের সাথে কথা হয়েছে; তার মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীণ এক ব্যক্তি বলেন- নাজির পাড়া ও মৌলভী পাড়ায় ইয়াবার টাকায় গড়ে তোলা হয়েছে রাজপ্রাসাদের মতো একেকটা বাড়ি। কিন্তু মরণনেশা ইয়াবার টাকায় গড়া বিলাশবহুল বাড়িগুলো নির্মাণ করা হলেও; সেখানে থাকতে পারছে না ইয়াবার রাজা খ্যাত বাড়ির মালিকরা। মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব মাদক ব্যবসায়ী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে তাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন- তালিকাভুক্ত যারা গডফাদার টাইপের তারা এখন পলাতক। আমরা সবার বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত সঠিক আছে আমরা তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালিত করছি এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনছি। এখন দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তাদের নামগুলো প্রকাশ পাওয়ায় তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। হয়ত অনেকেই চেষ্টা করছে দেশের বাইরে যাওয়ার- বলেন আফরুজুল হক টুটুল।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার (২ জুন) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া ও নাজিরপাড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পাঁচ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এনাম, আবদুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবুল কালাম ওরফে কালা ও জাফর আলমের বাড়িতে দু’দফায় অভিযান চালানো হয়। এসময় কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়ুয়া জানিয়েছেন- তবে মাদক ব্যবসায়িদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল আরো বলেন- আমরা সবাই সতর্ক আছি। বিশেষ করে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি আমরা একটা ভালো রেজাল্ট পাবো। কক্সবাজার জেলাকে ইয়াবামুক্ত করতে হলে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, সংবাদকর্মী ও এলিটশ্রেণী যারা আছে তাদেরকে এক কাতারে আসতে হবে বলে মত দেন জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এদিকে, শনিবার (২৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নোয়াখালীপাড়া এলাকায় র‌্যাব ৭-এর একটি দলের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক। তিনি টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর। এর আগে শুক্রবার (২৫ মে) সকাল ৯টার দিকে রামুর হিমছড়ি দরিয়া নগর থেকে উখিয়া-টেকনাফের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বড় বোন শামসুন্নাহারের দেবর মাদক ব্যবসায়ি আকতার কামালের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। এসময় ঘটন্স্থাল থেকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি, ৪ রাউন্ড কাতুজ ও ৪ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

পাঠকের মতামত: