ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

মাঠে নেমেছে লবণ চাষীরা : উৎপাদনের ‍লক্ষ্যমাত্রা ১৮ লাখ মে.টন

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে লবণ চাষে মাঠে নেমেছে চাষীরা। কক্সবাজারের ৬৫ হাজার একর জমিতে ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এবারে মাঠে নেমেছে কক্সবাজারের প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার জন লবণ চাষী। তবে সব চাষীদের ভয় এক জায়গায়, যদি বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করা হয় তাহলে তারা উৎপাদিত লবণের দাম পাবে না। এতে সব কিছু মাঠে মারা পড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হবে কক্সবাজারের একমাত্র স্বয়ং সম্পূর্ণ খাত লবণ শিল্প। সংশ্লিষ্ট্যদের দাবী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানী করে দেশের চরম ক্ষতি করছে। এদিকে উখিয়া ছাড়া জেলার বাকী ৭ টি উপজেলাতে লবণ চাষে ব্যাপক হারে মাঠে নেমে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা।
কক্সবাজার বিসিক এর লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ শামীম আলম জানান ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৭৬০ মেট্রিকটন,কিন্তু এ্কই সময়ে গত অর্থ বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন। আর চলতি বছরে কক্সবাজারের ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরন হবে। এর মধ্যে জেলার মহেশখালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে এছাড়া কুতুবদিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর, চকরিয়া পেকুয়া উপজেলা মিলে ২২ হাজার হেক্টর, রামু উপজেলাতে ২০০ হেক্টর, এবং টেকনাফে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হবে সে হিসাবে শুধু উখিয়া উপজেলাতেই লবণের চাষাবাদ নেই। তিনি জানান চলতি বছর অক্টোবরের দিকে ৫ লাখ মেট্রিকটন লবণ আমদানী করা হয়েছিল। সে কারনে চলতি বছরে লবণ উৎপাদন কমেছে। তবে এর আগে লবণের বাজার বেশ ভাল ছিল।
এ ব্যপারে মহেশখালীর কালামারছাড় প্রান্তিক লবণ চাষী মনজুর আলম বলেন বর্তমানে পুরু এলাকায় লবণ চাষীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে লবণ চাষে মাছে নেমেছে। বর্তমানে প্রতি কানি জমি ৩০ হাজার টাকার উপরে লাগিয়ত চলছে যা আগে ৮-১০ হাজার টাকা বেশি কখনই যেত না। তবে গত ২/৩ বছরে লবণের বেশ ভাল দাম পাওয়ার কারনে সবার ভেতরে এখন লবণ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। যদি আবহাওয়া ভাল থাকে তাহলে আমরা নিদ্রিষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।তবে একই ভাবে লবণ চাষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও তিনি সবার প্রতি আহবান জানান। কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী এলাকার লবণ চাষী নজরুল ইসলাম বলেন লবণ মাঠ আমাদের বাপ দাদার আমলের ব্যবসা,আগে ১০/১২ কানি জমিতে লবণ চাষ করতাম এখন আরো ১০ কানির মত বর্গা নিয়েছি প্রতি কানি ৩২ হাজার টাকা দরে।সে অনুযায়ী আমার ইনভেস্ট প্রায় ১০ লাখ টাকা,ইতি মধ্যে মাঠে পানি ঢুকিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছি। এখন শুধু দোয়া করবো আবহাওয়া যেন ভাল থাকে ,তাহলে ইনশাল্লাহ আমার মাঠে ভাল লবণ হবে।এ সময় তিনি দাবী করেন সরকার যদি ইচ্ছা করে কক্সবাজারের লবণকে একটি পরিপূর্ণ শিল্প হিসাবে গড়ে তুলতে পারে, বিদেশ থেকে যদি লবণ আমদানী না করে তাহলে বাংলাদেশের লবন বিদেশে রপ্তানী করা যাবে। যদি সবাইকে ঠিকমত পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় এবং চাষীদের সরকারি ভাবে সহয়তা করা হয় তাহলে আমি নিশ্চিত বাইরের দেশে আমাদের লবণ দেওয়া যাবে।
এদিকে চকরিয়ার কাকারা ্এলাকার লবণচাষী ফরিদুল আলম বলেন আমি সহ পরিবারের সবাই এখন পুরুদমে লবণ মাঠে নেমে পড়েছি, আশা করছি এবারে আমরা ভাল লাভবান হতে পারবো। তবে সব কিছু নির্ভর করবে সরকারের সদিচ্ছার উপর ঘাটতি না থাকা সত্বেও সরকার যদি বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করে তাহলে আমরা মাঠে মারা পড়বো। তিনি বলেনএক শ্রেনীর মধ্যস্বত্ব ভোগী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সব সময় বাংলাদেশের লবণ শিল্পকে ধ্বংস করে আসছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার লবণ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বলেন সবাই এখন পুরুদমে মাঠে নেমে পড়েছে সব লবণচাষীর চোখেমুখে এখন শুধুই স্বপ্ন,তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে প্রথমত আবহাওয়ার উপর দ্বিতীয়ত সরকারের আন্তরিকতার উপর। তিনি বলেন চলতি বছরের অক্টোবরে বিদেশ থেকে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিকটন লবণ আমদানী করা হয়েছিল সে সময় আমরা বলেছিলাম অন্তত ৩ লাখ মেট্রিকটন লবণ ও যদি আমদানী করা হতো তাহলে এখনো লবণের দাম আরো কিছুটা থাকতো। এতে কৃষকরা লাভবান হতো। বর্তমানে অল্প কিছু লবণ আছে সেটা মিল পর্যায়ে প্রতি মনে প্রায় ৪০০ টাকা আর মাঠ পর্যায়ে ৩০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি দাবী করেন সরকার যদি এই শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে চায় তাহলে কারো কান কথা না শুনে মাঠে এসে লবণের মজুদ দেখে তার পর লবণ আমদানীর সিব্ধান্ত নিতে হবে। আর প্রয়োজন না হলে কোন ভাবেই লবণ আমদানী করা যাবে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার লবণ চাষী সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন কক্সবাজারের লবণ দিয়ে ৬৪ জেলার মানুষ চলে কিন্তু বাতির নীচে অন্ধকার,আমরা এতদিন আরো বঞ্চিত ছিলাম তবে বর্তমান সরকারের সময়ে কিছুটা ভাল আছে কৃষকরা,২০১৬ সালের দিকে কক্সবাজারের লবণ চাষীরা ভাল লাভের মুখ দেখেছিল। কিন্তু আবারো বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করায় মাঠে লবণের দাম কমে গেছে। যদি সরকার লবণ শিল্পকে আরো কিছুটা পৃষ্টপোষকতা করতো তাহলে এই লবণ শিল্পের একটি যুগান্তকারী ইতিহাস রচিত হতো।
এব্যাপারে কক্সবাজার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম বলেন বর্তমানে শিল্পনগরী হিসাবে খ্যাত ইসলামপুরে ৬০ টির মত লবণ মিল আছে,এই সব লবণ মিলের মধ্যে বেশ কিছু আছে মান্দান্তা আমলের পরিবেশ। এখনো অনেক মিলে বাশের বেড়া উপরে কাঠের ছাউনী,অনেক শ্রমিক কাজ করে খালী পায়ে, ফলে কিছু নোংরা পরিবেশ সেখানে বিরাজ করে। এতে তারা মাঠ থেকে আনা লবণ কে মেশিনের মাধ্যমে ক্যামিকেল দিয়ে ধব ধবে সাদা করে কিন্তু আমার মতে এখানে লবণের আসল পুষ্টিগুন থাকে না। মাঠের সূর্য্যরে তাপে হওয়া লবণের মধ্যে সোডিয়াম, ক্যাসিয়াম থাকে সেটা মেশিনের মধ্যে দিয়ে গুনগত মান নস্ট হয়ে পড়ছে সে কারনে সেই সব মিলকে আরো আধুনীকায়ন করা খুব দরকার। সর্বোপরি বর্তমানে সাধারণ কৃষকরা যেভাবে উচ্চদাম দিয়ে ৬ মাসের জন্য লবণের মাঠ নিয়েছে যদি সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করলে তারা কোন ভাবেই সেই দাম উঠাতে পারবেনা। তাই কোন ভাবেই লবণ আমদানী না করার আহবান জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: