অনলাইন ডেস্ক :::
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা আরো তীব্র হয়েছে। সঙ্কট আরো গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে সেখানে খাদ্য সহায়তা স্থগিত করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। মৃত্যুর সংখ্যা সেখানে বাড়ছেই। হাজার হাজার মানুষ পালাচ্ছে সহিংসতা থেকে। এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম। বাকিরা জাতিগত বৌদ্ধ। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, ডব্লিউএফপি সহ ত্রাণ বিষয়ক এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারা বলে, এসব সংস্থার রেশন যাচ্ছে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের হাতে। সেই উগ্রপন্থিরা গত ২৫ শে আগস্ট নিরাপত্তা পোস্টে হামলা চালিয়েছে। সেই থেকে রাখাইনে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাখাইনে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতা মাঝে মাঝেই দেখা দেয়। কিন্তু এবারের সহিংসতা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ৫ বছরে এমন ভয়াবহতা দেখা যায় নি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে একবার রাখাইনে ধর্মায় দাঙ্গা দেখা দেয়। তখনও নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ও বৌদ্ধরা সহিংস হামলা চালায় রোহিঙ্গাদের ওপর। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হন। তারপর থেকে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ বিদেশী ত্রাণের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা সাধারণ মুসলিম। ত্রাণ বিষয়ক এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ শোনা যায়, তারা রোহিঙ্গাপন্থি। ফলে বর্তমানে যে সহিংসতা দেখা দিয়েছে তাতে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ জন্য ত্রাণ বিতরণ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানের সহিংসতায় আড়াই লাখ মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় সব রকম খাদ্য সহায়তা বন্ধ করছে ডব্লিউএফপি। নতুন করে যদি কেউ এখনকার অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা সহ সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছি। সরকারি হিসাবে রাখাইনে এ সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ৪০০। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা জীবন নিয়ে পালিয়েছেন এবং যেসব বৌদ্ধ পালিয়ে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বর্ণনামতে নিহতের বাস্তব সংখ্যা অনেক বেশি। যেসব এলাকা সবচেয়ে আক্রান্ত সেখানে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারছেন না। ফলে বাস্তব চিত্র জানা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থিরা হত্যাকান্ড ও অগ্নিসংযোগ করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সমন্বয় বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র পিয়েরে পেরোন বলেছেন, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই অনেক ক্যাম্পে খাদ্য ও মেডিকেল সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরাঁ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, এই সহিংসতা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত মানুষের কাছে নিরাপত্তা সহায়তা পৌঁছে দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পাঠকের মতামত: