ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সাগরের তীব্র ঢেউয়ে দিন দিন ভেঙ্গে যাচ্ছে সেন্ট মার্টিন

জসিম উদ্দিন টিপু :
জোয়ারের পানি সাগরের ঢেউয়ে দিন দিন ভেঙ্গে যাচ্ছে সেন্ট মার্টিন। পানির তীব্র করালগ্রাসে দ্বীপের ধর্মীয় গোরস্থান পর্যন্ত সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। অবাধে পাথর উত্তোলন, বালি এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের কারণেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত প্রবালদ্বীপের মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই টানা বৃষ্টিপাতে আবারও দ্বীপের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দ্বীপ রক্ষায় সেন্ট মার্টিনের মানুষ এখন চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। সরকারী বরাদ্দ না পেয়ে নিজেরাই এখন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সেন্ট মার্টিন রক্ষায় প্রকল্প গ্রহণের জন্য দ্বীপবাসী সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
এ দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু প্রায় দু‘শ বছর আগে। দ্বীপে বসতি শুরুর পর এভাবে কোনোদিন এখানে পানি ওঠেনি। এ রকম ভয়াবহ ভাঙনও কোনো সময় দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি আর সুমদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপের চারপাশেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ভেঙেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে। ঘূর্ণিঝড়ে বিস্তীর্ণ কেয়াবন
সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়‘শ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কঙ্কালও।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে দ্বীপের গাছ পালা একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। সাগর পাড়ে রোপিত বৃক্ষরাজি ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই এখন লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। দ্বীপের মানুষ আশংকা করছেন, সেন্ট মার্টিন রক্ষায় এগিয়ে না আসলে হয়ত প্রবালদ্বীপ একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
৮.৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রবালদ্বীপে আট হাজার মানুষ বসবাস করেন। ঘূর্ণিঝড় মোরা এবং বর্ষার ভারী বর্ষণে দ্বীপে বসবাসকারী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান খাঁন জানান, সরকারী-বেসরকারী বরাদ্দ না পেয়ে শতবর্ষী কবরস্থান সাগরে ভেসে যাচ্ছে দেখে দ্বীপ রক্ষায় আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সেন্ট মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, ঘূর্ণিঝড় এবং টানা বৃষ্টিপাতে প্রবালদ্বীপের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পালা ভেঙ্গে যাওয়ায় বৃষ্টিপাতে এবং ঢেউয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষা করা যাচ্ছেনা।
তিনি জরুরী ভিত্তিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষায় পরিবেশ বান্ধব একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ জানান, সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে সরকারের অনেক চিন্তভাবনা রয়েছে। তিনি প্রবালদ্বীপ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।

পাঠকের মতামত: